ভোররাতে এসে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েও মিলছে না টিকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০২১

রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডার পূর্বাঞ্চল সড়কের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দ্বিতীয়দিনের মতো চলছে গণটিকাদান কর্মসূচি। ওই কেন্দ্রে ৩৫০ জনকে টিকা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই অনুযায়ী পুরুষ ও নারীদের দুই লাইনে দাঁড় করিয়ে সিরিয়াল ধরে পর্যায়ক্রমে সকাল ১০টার দিকে টিকা দেয়া শুরু হয়।

টিকা নিতে রোববার (৮ আগস্ট) ভোররাতে কেন্দ্রে এসে সিরিয়ালে দাঁড়ান এলাকার বাসিন্দা সদরুল ইসলাম। দ্বিতীয়দিনে টিকাদান শুরুর সময়ে পুরুষদের লাইনে তার সিরিয়াল নম্বর ছিল ২৭। তবুও টিকা না নিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে তাকে।

সদরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ফজরের নামাজের পরই টিকা নিতে কেন্দ্রে এসেছি। তখন ২৬ জনের পেছনে ছিলাম। আমার সিরিয়াল নম্বর ছিল ২৭-এ। যদি সাড়ে তিনশো’ টিকা দেয়া হয়, তবে আমাদের লাইন থেকে ১৭৫ সিরিয়াল পর্যন্ত টিকা পাওয়ার কথা। কিন্তু আমার সিরিয়াল আসার আগেই ভেতর থেকে জানানো হচ্ছে- টিকা শেষ।’

নিজের পায়ে অপারেশন করায় অসুস্থ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অপারেশনের রোগী। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। আমরা কী অপরাধ করেছি? আমরা কী স্বাধীন দেশে বাস করি না।’

jagonews24

সদরুলের সামনে সিরিয়ালে থাকা টিকা নিতে আসা আরেকজন বলেন, ‘ভাই কী বলব, আমাদের ভাগ্য খারাপ। ভাত পেয়েও খেতে পারি না, কাউয়ায় খেয়ে যায়! এই টিকা নেয়ার জন্য রাতে ঘুমাতে পারিনি, চেহারাটা একটু দেখেন।’

শুধু এই দু’জন নয়, শত শত মানুষ টিকা নিতে ভোরে এসে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েও টিকা না পেয়ে এমন ক্ষোভ জানিয়েছেন।

তাদের অভিযোগ—সিরিয়ালে দাঁড়ানোদের টিকা না দিয়ে প্রভাবশালীরা নিজেদের ‘কমিশনারের লোক’ পরিচয় দিয়ে পরে এসেও আগে টিকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। ফলে সিরিয়ালে দাঁড়ানো মানুষ টিকা পাচ্ছেন না। টিকাদানেও স্বজনপ্রীতি হচ্ছে।

রোববার সকালে সরেজমিন পূর্বাঞ্চল সড়কের ওই প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত মানুষ টিকা নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেন্দ্রে প্রথম ডোজের ৩৫০টি টিকা বরাদ্দ বরাদ্দ থাকলেও দীর্ঘ লাইনে এক হাজারের বেশি নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের অধিকাংশই ফজরের নামাজের পরপরই কেন্দ্রে এসেছেন বলে জানিয়েছেন।

পুরুষ ও নারীদের আলাদা দুই লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে ডেকে নিয়ে টিকা কার্ড নিয়ে টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে সিরিয়ালে দাঁড়ানো মানুষেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও স্কুলের মূল গেটের নাগাল পাচ্ছেন না।

jagonews24

ভিড় ঠেলে লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকা পাচ্ছেন, তারা নিজেদের অনেকটা সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তাদেরই একজন সোমা বেগম।

টিকা নিয়ে বেরিয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ফজরের আজানের আগে এসে দাঁড়িয়েছি। নারীদের লাইনে আমার সিরিয়াল নম্বর ছিল ৭০। অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল- আমি ভেতরে যেতে পারব না। পুলিশের একজন সদস্যের সহযোগিতায় আমি ভেতরে ঢুকতে পেরেছি।’

সোমা বেগম আরও বলেন, ‘কষ্ট করে ভেতরে ঢুকলেও সেখানে সবকিছুতে বিশৃঙ্খলা। নিচতলায় কোনো নিয়ম নাই। সেখানে গিয়ে হুড়োহুড়িতে আমার গলায় ওড়না প্যাচিয়ে যায়। প্রায় মরতে বসেছিলাম। তবে স্কুলের দ্বিতীয়তলায় যেখানে টিকা দেয়া হচ্ছে, সেখানে কোনো সমস্যা নেই।’

দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য তাকে ৫ সেপ্টেম্বর আবার আসতে বলা হয়েছে বলে জানান সোমা বেগম।

jagonews24

টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো.সাইফুল জাগো নিউজকে, ‘টিকা নেয়ার জন্য ব্যাপক ভিড়। সামলানো মুশকিল হয়ে গেছে।’ তবে সিরিয়াল ছাড়া রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

পূর্বাঞ্চল সড়কের প্রাথমিক বিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রের সুপারভাইজার মহসিন আলী বলেন, ‘বাইরে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি-না, সেটা আমরা জানি না। সিরিয়াল ধরে যারা ভেতরে আসছেন, তাদের নিবন্ধন করিয়ে টিকা দিয়ে কার্ড দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এই কেন্দ্রে ৩৫০টি প্রথম ডোজের টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে লাইনে যত মানুষ এসেছেন, তাদের সবাইকে টিকা দেয়া আজ সম্ভব হবে না। তবে পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবেন।’

এইচএস/এএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।