তিনি বিআরটিএর দালাল, ভিজিটিং কার্ডে তাঁতী লীগ নেতা!
প্রথম দিনেই লার্নার কার্ড (শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স)। এরপর পরীক্ষায় ফেল করলেও পাস। পরীক্ষা না দিলেও সমস্যা নেই। তবে তার জন্য গুনতে হবে বাড়তি টাকা। দালালের কথা শুনলে মনে হবে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় বিন্দুমাত্র জটিলতা নেই। হাজার দশেক টাকা খরচ করলেই ঝামেলা ছাড়াই বেরিয়ে আসবে লাইসেন্স। এমনকী তিন-চার মাসের মধ্যে মিলবে স্মার্টকার্ডও।
রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অফিসের চিত্র এটি। এটা যেন দালালদের স্বর্গরাজ্য। এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলেই পড়তে হবে তাদের খপ্পরে।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মিরপুরের বিআরটিএ অফিসে গ্রাহকবেশে প্রবেশ করলে দেখা মাত্রই এগিয়ে আসেন এক দালাল। প্রস্তাব দিয়ে বসেন ‘কোনো হেল্প লাগলে বইলেন’। এসময় আগ্রহ দেখালেই শুরু হয় দ্রুত কীভাবে লাইসেন্স হাতে পাবেন সেই প্রলোভন।
তাদের সঙ্গে একবার আলাপ করলে বারবার ভোটার আইডি কার্ড-ছবি এসব বের করার তাগিদ দিতে থাকেন। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করে না দিচ্ছেন, ততক্ষণ চলতে থাকবে তাগিদ। এসব দালালেরা শুধু কথায় নয়, কাজেও বিশ্বাসী বলে প্রচার রয়েছে।
তবে জাগো নিউজের প্রতিবেদককে তাৎক্ষণিকভাবে প্রস্তাবে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে ভিজিটিং কার্ড হাতে ধরিয়ে দেন ওই দালাল। বলেন-‘লাগলে আইসেন, করে দিমুনে’।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অফিসে দালালি করলেও ব্যক্তিগত আলাদা একটি পরিচয় রয়েছে তার। যার প্রমাণ মেলে ভিজিটিং কার্ডে। সেখানে নাম লেখা ফখরুল আলম ওরফে রতন। বাংলাদেশ তাঁতী লীগের কাফরুল থানার দফতর সম্পাদক।
এটা তো রাজনৈতিক কার্ড প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ওইটাই আমার কার্ড’।
রতন দালালের মতো বেশকিছু দালাল সারাদিনই সক্রিয়ভাবে ঘোরাঘুরি করেন বিআরটিএ অফিস চত্বরে। লাইসেন্স করতে এসেছেন এমন ব্যক্তিকে চিনতে পারলেই ঘুরেফিরে এসে বারবার স্বেচ্ছায় সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তারা।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে প্রশ্ন করলে বিআরটিএ’র মিরপুর শাখার উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শফিকুজ্জামান ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, দালালরা সক্রিয়। অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। মাঝে-মধ্যে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরাও গ্রাহকদের সচেতন করছি। আমাদের তথ্যকেন্দ্র সব সময় খোলা। যে কোনো প্রয়োজনে গ্রাহকরা আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। দালালদের কাছে গিয়ে যেন তারা প্রতারিত না হোন।
এমআইএস/জেডএইচ/এএ/জিকেএস