‘ইভ্যালির রাসেল চেয়েছেন ৬ মাস, হাতে এখনো ৫ মাস’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩১ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের মুক্তি দাবির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার সুযোগ অব্যাহত রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

তারা বলছেন, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ইভ্যালি এমডি রাসেল ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। এর মধ্যে মাত্র এক মাস শেষ হয়েছে। তার হাতে আরও পাঁচ মাস সময় আছে। ফলে তাকে এ সময়টুকু দেয়া উচিত। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে, তখন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের অর্ডার নেওয়া ও পণ্য সরবরাহও যথারীতি চালু রেখেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে ইভ্যালি এমডির বাসার সামনে বিক্ষোভ করেন গ্রাহকরা। এসময় তারা ইভ্যালি এমডির মুক্তি ও ইভ্যালির ব্যবসা সচল রাখার সুযোগ দাবি করেন। ‘ইভ্যালির কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। রাসেল ভাইয়ের মুক্তি চাই’- এসময় গ্রাহকদের এ ধরনের স্লোগান দিতেও দেখা যায়।

এদিন বিকেল সোয়া ৫টার পর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে র‌্যাবের একটি সাদা গাড়িতে করে তাদের র‌্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এ দম্পতিকে সেখানেই রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ইভ্যালির দুই শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেফতার হওয়ার পর ফয়সাল নামে প্রতিষ্ঠানটির এক গ্রাহক বিক্ষোভকালে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইভ্যালি তো বলে নাই, তারা টাকা দেবে না বা পণ্য দেবে না। আজকে ইভ্যালি থাকলে মানুষ টাকা পাবে। প্রতিষ্ঠান না থাকলে তো টাকা পাবে না। তখন যুবক, ডেসটিনির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতো ইভ্যালির টাকার জন্য মানুষ পথে পথে ঘুরবে।’

মাহমুদুল নামের অপর একজন বলেন, ‘ইভ্যালিতে ইনকামের কিছু টাকা ইনভেস্ট করেছে মানুষ, কিছু সুবিধার জন্য। আজ ইভ্যালি না থাকলে মানুষ পথে বসবে। ই-অরেঞ্জ, ধামাকার পর ইভ্যালিও যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।’

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইভান বলেন, ‘ইভ্যালি তিন বছর ধরে ব্যবসা করছে। তাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন। ইভ্যালি বাংলাদেশের আলিবাবা হতে পারবে।’

শাওন নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা রাসেল ভাইয়ের মুক্তি চাই। ইভ্যালিকে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে রাসেল ভাই ছয় মাস সুযোগ চেয়েছেন। মাত্র এক মাস শেষ হয়েছে। তার হাতে আরও পাঁচ মাস সময় আছে। তাকে মুক্তি দিয়ে এ পাঁচ মাস নজরদারিতে রাখা হোক। যদি তিনি ব্যর্থ হন, তবে তাকে গ্রেফতার করা হোক।’

jagonews24

গতকাল বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক বাদী হয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন।

মামলায় লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। পণ্যের অর্ডার বাবদ বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পুরোপুরি পরিশোধ করা হয়। পণ্যগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়। সবশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগের মাধ্যমে অর্ডার করা পণ্যগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা।

এতে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে ইভ্যালি পণ্য প্রদান ও টাকা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে যান। এসময় এমডি রাসেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। একপর্যায়ে অফিসের ভেতরে অবস্থান করা রাসেল উত্তেজিত হয়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং পণ্য অথবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ভয়-ভীতি ও হুমকিসহ তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়। এতে তারা চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিনযাপন করছেন এবং পণ্য বুঝে না পাওয়ায় আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মামলার এজাহারে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অপরাধের কথা বলা হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারাগুলো হচ্ছে- ৪২০, ৫০৬ ও ৪০৬।

jagonews24

দণ্ডবিধির ৪২০ নম্বর ধারায় প্রতারণা করে সম্পত্তি বা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ অপরাধে একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

এছাড়া ৪০৬ নম্বর ধারায় বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছর জেল, অর্থ জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ৫০৬ নম্বর ধারায় ভুক্তভোগীকে হত্যা বা আঘাত করার ভয়ভীতি দেখানোর অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। গত ২৫ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও এমডির সব ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে এক সভায় ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ইভ্যালির প্রধান দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করলো র‌্যাব।

এসএম/এমকেআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।