ভাঙাড়ির দোকান থেকে কেনা নামিদামি ব্র্যান্ডের বোতলে নকল মদ বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২২
গ্রেফতার নকল মদের কারখানার মালিক ও তার দুই সহেযোগী

ইথানল, স্পিরিট ও নিম্নমানের রঙ দিয়ে মদ তৈরি করতো একটি চক্র। পরে এসব মদ বোতলজাত করে নামিদামি ব্র্যান্ডের লেভেল লাগিয়ে বিক্রি করতেন তারা। গত ছয় মাস ধরে চক্রটি রাজধানীতে বসে এভাবে নকল মদ তৈরি করে বিক্রি করে আসছিল।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর)। নজরদারি এক পর্যায়ে নকল মদ তৈরির কারখানাটির সন্ধান পায় তারা। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাতে রামপুরা রিয়াজবাগ এলাকায় ভেজাল ও নকল মদের কারখানায় অভিযান চালায় ডিএনসি।

অভিযানে কারখানাটির মালিক আশরাফুজ্জামান ওরফে মোশারফসহ (৩৫) তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অপর দুজন হলেন- আশরাফুজ্জামানের সহযোগী আবুল খায়ের চৌধুরী (৬৯) ও হায়দার ভূঁইয়া (৩৬)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০ বোতল বিদেশি ব্ল্যাক লেবেল, ৫ বোতল নেমিরফ, ৮ বোতল কেরুস ফাইন ব্রান্ডি, মদ তৈরির উপকরণ- ইথানল ২০ লিটার, এসেন্স ৪০০ গ্রাম, চারকল পাউডার ৪৫০ গ্রাম, বোতলজাত করার পাইপ একটি, বিদেশি মদের লেভেল ৮০টি, মদের কর্ক ৮০টি, খালি বোতল ৩০টি ও একটি স্টিলের চোঙ্গা জব্দ করা হয়।

jagonews24

শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটির উপ-পরিচালক (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) মো. রাশেদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, একটি চক্র বাজারে নকল মদ সরবরাহ করে মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একটি বিশেষ টিম বৃহস্পতিবার রামপুরা এলাকার রিয়াজবাগে কারখানটিতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে কারখানার মালিকসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অভিযানে বিপুল পরিমাণে ভেজাল মদ তৈরি উপকরণ জব্দ করা হয়।

মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ইতোপূর্বে বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল মদ পান করে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ফলে ডিএনসির মহাপরিচালক ভেজাল মদ প্রতিরোধের নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযানটি পরিচালনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নকল মদ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, বিভিন্ন ভাঙাড়ির দোকান থেকে চক্রটি প্রথমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের খালি বোতল সংগ্রহ করেন। পরে তারা অবৈধভাবে মদ তৈরি করার স্প্রিরিট তৈরি করেন। এছাড়া মদ তৈরি করার আরও রাসায়নিক উপকরণ সংগ্রহ করেন তারা। পরে এমনভবে নকল মদ তৈরি করে বোতলজাত করা হতো যেন খালি চোখে দেখলে কোনোভাবেই নকল মনে হবে না। এরপর তারা বাজারে আসল মদ বলে ওই নকল মদ বিক্রি করতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, গত ছয় মাস ধরে তারা এই নকল মদ তৈরি করে বিক্রি করে আসছিলেন।

ভাঙাড়ির দোকান থেকে কেনা নামিদামি ব্র্যান্ডের বোতলে নকল মদ বিক্রি

কোনো ওয়্যারহাউস তাদের কাছ থেকে মদ কিনতো কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদুজ্জামান বলেন, তারা কোনো ওয়্যারহাউসের কাছে মদ বিক্রি করতেন না। খুচরাভাবে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে মদ বিক্রি করতেন তারা। এছাড়া নতুন বিধিমালা অনুযায়ী বারগুলো বিদেশি মদ আমদানি করতে পারবে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ দেশি ও ৪০ শতাংশ বিদেশি মদ রাখতে পারবে বারগুলো। ফলে বারগুলো নিজেরাই আমদানি করে।

কেন এই নকল মদ ক্রেতারা কিনছেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নকল মদ এমনভাবে বোতলজাত করা হতো যে মানুষ এটা বুঝতে পারে না আসল নাকি নকল। যারা কিনেছেন তারা আসল মদ মনে করেই কিনেছেন। নকল মদ চেনার কোনো উপায় নেই। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, অবৈধ উৎস থেকে কোনো কিছু কিনলে সেটা ভেজাল বা নকল হবে।

আইস ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার তিন মাদক কারবারি
এদিকে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (৪ মার্চ) সকালে পৃথক একটি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর খিলক্ষেত ও ধানমন্ডি এলাকা থেকে ২০০ গ্রাম আইস (ক্রিস্টাল মেথ) ও এক হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (উত্তর)।

টিটি/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।