‘উপাত্ত সুরক্ষা আইনে’ ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশের সুযোগ রয়েছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন’ এর খসড়ায় জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় চলমান রেখে আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় সংস্থাটি। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত আইনটির সর্বশেষ খসড়ার ওপর টিআইবির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করে হস্তান্তর করে।

টিআইবি বলছে, স্বাধীন কমিশনের পরিবর্তে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি এজেন্সি গঠন, দায়মুক্তির সুযোগ ও ‘উপাত্ত’ স্থানীয়করণের মতো অবিবেচনাপ্রসূত বিধান জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নজরদারির আশঙ্কা জোরদার করেছে। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় চলমান রেখে আলোচ্য খসড়াটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা প্রয়োজন।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি বিশেষায়িত এজেন্সি হিসেবে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন করা হয়েছিল। ভিন্নমত দমনে এবং ওই আইনের অপব্যবহারে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সেই এজেন্সির নজরদারিমূলক ভূমিকা কারও অজানা নয়। জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার দায়িত্ব, টিআইবির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মূলত ‘আই-ওয়াশ’ হিসেবে এই এজেন্সির পরিবর্তে একইভাবে একক নিয়ন্ত্রণ আর বিধি প্রণয়নের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নতুন একটি এজেন্সি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, আমাদের আরও একটা নিবর্তনমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে আন্তর্জাতিক চর্চার আলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করুন।

টিআইবির অভিমত, এই খসড়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবকিছুর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে, এমন একটা ধারণা থেকে সরকার বেরিয়ে আসতে পারছে না। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার সংবিধান স্বীকৃত অধিকারের আলোকেই এ আইনের খসড়া করতে হবে।

ড. জামান বলেন, একটি আইনের কোনো একটি ধারাকে আলাদা করে বিবেচনার সুযোগ নেই। কারণ আইনের বাস্তবায়ন সবগুলো বিধানের সমন্বিত প্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল। আমরা দেখছি, সরকারের নিয়ন্ত্রণে আলাদা একটি এজেন্সি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অন্য ধারায় আবার ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সৃষ্টি করে দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, সব ব্যক্তিগত তথ্য দেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা। এই তিনটি বিধানকে একসঙ্গে বিবেচনা করা হলে এটা বুঝতে সমস্যা হয় না যে, এখানে সরকার যেন খেয়াল খুশি মতো জনসাধারণের তথ্যে অনুপ্রবেশের ও নজরদারির সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

এমন ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্য থেকেই ব্যক্তিগত তথ্যের স্থানীয়করণ এবং স্থানান্তরের নিষেধাজ্ঞার মতো অবাস্তব ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধান এ খসড়া থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছে টিআইবি।

ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, শুরুতে এ দেশগুলো স্থানীয়করণের কথা ভাবলেও, বাস্তবতা বিবেচনায় সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। অথচ আমরা তিন দফা এ খসড়া সংশোধন হতে দেখলেও, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখনো সব তথ্য দেশেই সংরক্ষণের চিন্তা বাদ দিতে পারছি না। সংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা জানতে চাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নানা ধরনের অ্যাপে দেওয়া তথ্য কীভাবে বাংলাদেশে মজুত করা হবে বা সেটা আদৌ বাস্তবসম্মত কি না।

তিনি আরও বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশে তথ্য সংরক্ষণের জন্য কোন ক্ষমতার সার্ভার প্রয়োজন হবে এবং তা সচল রাখতে কী পরিমাণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে, খসড়া প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টজন তা বিবেচনা করেছেন কি না, তা পরিষ্কার নয়।

ড. ইফতাখারুজ্জামান বলেন, টিআইবির প্রত্যাশা এ আইনের খসড়া প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও মানদণ্ডের আলোকে পাওয়া সুপারিশ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন।

এইচএস/আরএডি/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।