গাইবান্ধা-৫ আসন

নির্বাচন কমিশনের ‘অদূরদর্শিতায়’ ভোট বন্ধ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২২
ছবি: জাগো নিউজ

অনিয়ম, কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি বলছে, ভোটকেন্দ্রের গোপনকক্ষে আইন লঙ্ঘন করে একটি পক্ষের ঢুকে পড়ার সত্যতা পেয়েছে তারা। এমন ঘটনা দু-একটি কেন্দ্রে নয়, অন্তত ৫০ কেন্দ্রে ঘটেছে।

ভোটকেন্দ্রে থাকা সিসিটিভির ফুটেজে ঢাকা নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে বসে নিজ চোখে তা দেখেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনাররা। এরপরই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ভোটগ্রহণ বন্ধের ঘোষণা দেয় ইসি।

তবে নিকট অতীতে কোনো নির্বাচন কমিশনকে এভাবে পুরো নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি। ফলে এ নিয়ে রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকসহ সব মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

ভোটগ্রহণ বন্ধের এমন সিদ্ধান্তকে ইসির ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা হিসেবেও দেখছেন অনেকে। তারা বলছেন, গাইবান্ধায় আগে থেকে ইসির প্রস্তুতির কমতি দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির অভাবও স্পষ্ট। এছাড়া যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, সেখানে কেন্দ্রভিত্তিক ভোট স্থগিত করা যেতো। তা না করে তদন্ত ছাড়াই সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে ইসির সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তাদের কথা প্রশাসনের কেউ শুনছেন না। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিলে এভাবে পুরো ভোট বন্ধ করতে হতো না। ইসির উচিত ছিল পরিস্থিতি দেখে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া। এখন অনেকের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে গেলো।’

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোট বন্ধের ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া আছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও তা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। কারণ একটি আসনের ভোট বন্ধ হলে জনমনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার ও প্রার্থীদের আর্থিক ক্ষতি হয়। এজন্য যেসব কেন্দ্রে সমস্যা হয়, সেসব কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।

আরও পড়ুন>> গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ: সিইসি

বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে ব্রিফিং করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে আমি এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররা নিজ চোখে ভোটকেন্দ্রে আইন লঙ্ঘন হতে দেখেছি। তবে কাদের কারণে আজকের এ ভোট (গাইবান্ধা-৫ আসনে) বন্ধ করতে হয়েছে, তা নিয়ে এখনো আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় ভোটগ্রহণ সঠিকভাবে হচ্ছে না, ফেয়ারলি হচ্ছে না। তাহলে নির্বাচন কমিশন সব ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে পারে। আমরা এ আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো নির্বাচনী এলাকার (গাইবান্ধা-৫ আসন) ভোট কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। নির্বাচন কর্মকর্তাদের তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। ওখানে এখন আর ভোট হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন>> কাদের কারণে ভোট বন্ধ, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি: সিইসি

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চারজন প্রার্থী। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্রপ্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। নৌকার প্রার্থী রিপন ছাড়া সবাই অনিয়ম, জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটবর্জন করেছেন।

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ীই আমরা ভোট করছিলাম। আমাদের অনেক টাকা-পয়সা ও শ্রম গেছে। ইসি যদি মনে করতো কোনো কেন্দ্রে সমস্যা হচ্ছে, সেই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করতে পারতো। তা না করেই পুরো ভোট বন্ধ করা ঠিক হয়নি। এখানে কোনো মারামারি হয়নি, কেন্দ্র দখলও হয়নি। তাহলে কেন এমন সিদ্ধান্ত?’

আরও পড়ুন>> এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, সরকারকে বিব্রত করতেই এ ঘটনা: রিপন

এদিকে, ইসির এমন সিদ্ধান্ত বোধগম্য নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। ভোট বন্ধের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধায় নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি। ঢাকায় নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এতগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিলো, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার জানা মতে এভাবে পুরো আসনের ভোট বন্ধের ঘটনা কখনো ঘটেনি। তবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনগণের প্রতিরোধের মুখে নারায়ণগঞ্জের একটি আসনের এক উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পুরো এলাকায় নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়াটা প্রথম বলে মনে হচ্ছে।’

এইচএস/এএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।