২০২৩ সালের মাঝামাঝি শ্রম আইন সংশোধন, অর্থনৈতিক অঞ্চলেও প্রযোজ্য

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২২
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

২০২৩ সালের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংশোধিত শ্রম আইন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও প্রযোজ্য হবে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৬তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

গত ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ অধিবেশনে অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন।

আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন দুটির মধ্যে কোনটি-নতুন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রয়োগ হবে তা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রয়োগ হবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রগুলো কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে রাজনৈতিক সংকটের কারণে এটি আরও প্রকট হয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ধরনের দুর্দশার মধ্যে বাংলাদেশ আইএলও কনস্টিটিউশনের ২৬ অনুচ্ছেদের অধীনে উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

‘গত মার্চ মাসে আইএলও’র গভর্নিং বডির সভায় প্রতিবেদন দাখিল করার পর প্রায় সাত মাসে বাংলাদেশ সরকার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে লক্ষণীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। সরকার দেশের সামগ্রিক শ্রম পরিস্থিতির সুষম উন্নতি করতে রোডম্যাপের চারটি ক্লাস্টারে অগ্রগতি সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছে।’ বলেন আনিসুল হক।

তিনি বলেন, করোনা অতিমারির সময় লকডাউন, কর্মঘণ্টা সংক্ষিপ্তকরণসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শ্রম অধিকার বিষয়ক আইনি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ সরকার অবিচল ছিল। সরকার এরই মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা সংশোধন করেছে এবং বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এই প্রক্রিয়ায় আইএলও বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যবেক্ষণকে যথাযথ বিবেচনা করা হয়েছে।

আইএলও-কে আশ্বস্ত করে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনি সংস্কারের পরবর্তী ধাপ হিসেবে শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১৭টি স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে সংশোধনী প্রস্তাব পাওয়া গেছে। ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গুরুত্ব সহকারে এ সংশোধনী প্রস্তাবগুলো সংকলনের কাজ করছে।

‘ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন পর্যালোচনা কমিটি সংকলিত সুপারিশ/প্রস্তাবগুলোর ওপর আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করবে এবং জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ কাউন্সিলের অনুমোদন চাইবে। আশা করি, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং সংশোধিত এ শ্রম আইন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলেও প্রযোজ্য হবে।’

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, অধিকতর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা হয়েছে। শ্রম অধিদপ্তর চারটি শিল্প সম্পর্কিত ইনস্টিটিউট এবং ৩২টি শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের সহায়তায় শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সহায়তা করার জন্য শ্রম অধিদপ্তরে একটি প্রি-অ্যাপলিকেশন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে।

রোডম্যাপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম পরিদর্শন এবং প্রয়োগকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শ্রম খাতে গুণগত পরিবর্তন আনতে দেশি-বিদেশি সামাজিক অংশীদার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গভর্নিং বডির ৩৪৪ তম অধিবেশনে আইএলও’র মহাপরিচালকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএলও কনভেনশন ১৩৮ অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর করার কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতেও বাংলাদেশ সরকার ‘জবরদস্তি শ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন, ১৯৩০’ এর প্রটোকল ২৯ অনুসমর্থন করেছে। স্পষ্টতই, এগুলো আইএলও শ্রম মানদণ্ডের প্রতি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির অংশ।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী, সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. সুফিউর রহমান এবং অতিরিক্ত শ্রম সচিব জেবুন্নেছা করিম প্রমুখ।

আরএমএম/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।