নারীকে গাড়ির নিচে টেনে নেওয়া

‘আম্মু চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হই, আমি চেষ্টা করবো’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৬ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২২

 

তেজগাঁও ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান খান রোহান। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বাবা মাহবুবুর রহমান খান ডলারকে হারিয়েছেন ১৩ বছর বয়সী রোহান। বাবার মৃত্যুর বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ২ ডিসেম্বর মা রুবিনা আক্তারকে হারালো রোহান। ওই দিন তেজগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে হাজারিবাগে বোনের বাসায় যাচ্ছিল রুবিনা আক্তার। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস এলাকায় প্রাইভেটকারের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি। মায়ের মৃত্যুতে অনেকটা নির্বাক হয়ে পড়েছে কিশোর রোহান।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার হাজারিবাগের ভাগলপুরের ৩ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা গেছে একটি পুরাতন বাড়িতে একটি কক্ষে কয়েকজন ছোট্ট শিশুর সঙ্গে বসে আছে আরাফাত রহমান খান রোহান। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা বলছে সে।

আরও পড়ুন>> এটি দুর্ঘটনা নয়, শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তিতে সহায়তা করবে পুলিশ

দীর্ঘ অপেক্ষার পর রোহানের সঙ্গে অল্পকিছুক্ষণ কথা হয় জাগো নিউজের। নিজের নাম ও পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাইলে রোহান জাগো নিউজকে বলেন, তেজগাঁও ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। পরীক্ষা দিয়েছি, আগামী ১৭ ডিসেম্বর রেজাল্ট দেবে। মায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রোহান বলেন, কী বলবো। পড়াশোনা ভালো করে করতে বলতেন। আম্মু চাইতেন আমি ইঞ্জিনিয়ার হই। আমি চেষ্টা করবো সেটা হওয়ার। আম্মু শেষ কথা বলেছিলেন আমাকে বাসায় থাকতে।
মায়ের সঙ্গে কোথায় কোথায় গেছো— জানতে চাইলে রোহান বলেন, স্কুলে যেতাম। এছাড়া নানু ও মামার বাসায় নিয়ে যেতো। আর মাঝে মধ্যে মার্কেটে নিয়ে যেতো।

মায়ের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে বাবা-মা হারা রোহান বলেন, আম্মু মারা গেছে আমি যানতাম না। নানুর বাসায় যাওয়ার পরে জানতে পেরেছি। আমার আম্মুকে যেভাবে মেরেছে এরকমভাবে যেন ঘাতকের মৃত্যু হয়।

বাবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় সরকার থেকে একটি বাসা পান রুবিনার পরিবার। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবারই এখন সংসার হয়েছে। প্রায় প্রতি শুক্রবারই ভাইয়ের বাসায় যেতেন রুবিনা। আর সেখান থেকে ছেলের জন্য প্রায়ই খাবার নিয়ে আসতেন।

বর্তমানে রোহানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত রুবিনার বড় ভাই জাকির হোসেন মিলন বলেন, প্রায় প্রতি শুক্রবারই আমরা ভাই-বোন একত্রিত হতাম। যাওয়ার সময় ভাগিনার জন্য খাবার ও দোকান থেকে বিভিন্ন কিছু কিনে দিতাম। ভাগিনার আর কেউ রইলো না। আমরা চেষ্টা করবো ওকে দেখার। কিন্তু আমরা সবাই ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

আরও পড়ুন>> ঢাবিতে গাড়ির চাপায় নারী নিহতের ঘটনায় মামলা

অন্যদিকে, মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে— শুক্রবার মোটরসাইকেলযোগে তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে বোনের বাসা হাজারীবাগে যাচ্ছিলেন রুবিনা আক্তার। শাহবাগ জাদুঘরের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর রুবিনাকে টেনেহিঁচড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা হয়ে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত নিয়ে যায়। ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪টা ৪০মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রুবিনা আক্তার একমাত্র ছেলে আরাফাত রহমান খান রোহানকে নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্বামীর বাড়িতে থাকতেন।

আরএসএম/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।