পরিকল্পিত জোড়া খুন হয়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনা, রহস্য ভেদ পিবিআইয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শাহান শাহ আলম বিপ্লব (৩৪) একাধিক হত্যা মামলার আসামি। মো. মনির হোসেন (৩৪) তার দেহরক্ষী। বিপ্লব এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতো না। বিপ্লব শুধু খুন করেই থামেননি, যারা তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতেন তাদের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিশোধ নিতেন।

তবে শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হয়নি বিপ্লবের। একসময় তার সঙ্গে ডিস ব্যবসা করা মামুন নামে এক ব্যক্তি অন্যদের নিয়ে বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বেশ কয়েকবার হত্যাচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মাইক্রোবাস চাপায় হত্যার পর সাজানো হয় সড়ক দুর্ঘটনার নাটক। সেই নাটকও ধোপে টেকেনি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে বিপ্লব ও তার দেহরক্ষী মনির হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। একই সঙ্গে চারজনকে গ্রেফতারও করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. মাসুম মিয়া, সোহাগ মিয়া, মাসুদ মিয়া ও মামুন মিয়া।

jagonews24

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১২ আগস্ট দিনগত রাত ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে নরসিংদীর শিবপুরে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে শাহান শাহ আলম বিপ্লব ও মনির হোসেন মারা যান। পরে সড়ক পরিবহন আইনে অজ্ঞাতনামা চালককে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। পরবর্তী সময়ে মাইক্রোবাসের মালিক আসামি মাসুম মিয়াকে পলাতক দেখিয়ে হাইওয়ে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নিহত বিপ্লবের ভাই সোহাগ মিয়া এ ঘটনায় আদালতে একটি সিআর বা নালিশী মামলা করেন এবং হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক অভিযোগপত্রের বিষয়ে না-রাজি দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতেআদালত সিআর মামলাটি পিবিআই নরসিংদীকে অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

jagonews24

পিবিআই প্রধান বলেন, মামলার তদন্তে দেখা যায়, ২০১৯ সালে দুলাল গাজীকে রায়পুরা লোচনপুর বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়। যার প্রধান আসামি ছিলেন বিপ্লব গং। ঘটনাটি বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে সংঘটিত হলেও বিপ্লব গংদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। তদন্তকালে আরও জানা যায়, বিপ্লবের বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ ১০টি মামলা ও ১১টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। কিন্তু সে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এবং তার ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে চায়নি। এ পরিস্থিতিতে পিবিআই বিপ্লবকে গ্রেফতার করে।

কারাভোগ শেষে বিপ্লব যেদিন জেলখানা থেকে বের হয়ে আসে ওইদিনই সাক্ষীদের দুজন জুয়েল (২২) ও নাঈমকে (২৩) এলাকায় ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

jagonews24

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বিপ্লব ও তার সহকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকার অনেকে ক্ষিপ্ত হয়। এরমধ্যে এক সময় বিপ্লবের সঙ্গে ডিসের ব্যবসা করা মামুন মিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে বিপ্লবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

পিবিআই প্রধান বলেন, এ ঘটনায় ৯ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থদাতা হিসেবে ওমর ফারুক মোল্লা নামে এক প্রবাসীর নাম উঠে এসেছে। তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে।

আগামী সপ্তাহে জড়িত নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

টিটি/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।