অসহায়দের কথা শুনতে ক্যাম্প কমান্ডারের প্রতি র‍্যাব ডিজির বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৩

র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, র‍্যাবে কর্মরত অবস্থায় যারা শহীদ হয়েছেন বা সাধারণ মানুষ যারা র‍্যাবের সহায়তা চাইতে যাবেন তাদের সঙ্গে অবশ্যই ক্যাম্প কমান্ডার কথা বলবেন। আমি অভিযোগ পাচ্ছি, অনেক ক্যাম্প কমান্ডার অসহায় সাধারণ মানুষের কথা শোনেন না। আমি পুনরায় এমন অভিযোগ শুনতে চাই না।

সোমবার (২০ মার্চ) এলিট ফোর্স র‍্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও র‍্যাব মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ উপলক্ষে র‍্যাব মহাপরিচালকের দরবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সেখানে ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও), ক্যাম্প কমান্ডারসহ উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন।

jagonews24

উত্তরা কুর্মিটোলাস্থ র‍্যাব সদর দপ্তরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, র‍্যাব কর্মরত অবস্থায় যারা শহীদ হয়েছেন সেসব পরিবারকে আমরা প্রতি বছর আমন্ত্রণ জানাই। আমরা তাদের আর্থিক সহায়তা, উপহারসামগ্রী দিয়ে থাকি। তবে আজ যে সন্তান পিতা হারা হয়েছেন, যে স্ত্রী স্বামী হারা হয়েছেন আমরা সেই শূন্যতা কোনো অবস্থায় অর্থ-পুরস্কার দিয়ে পূরণ করতে পারবো না।

কর্নেল আজাদের স্ত্রী এখানে বক্তব্যে বলেছেন, র‍্যাব বাংলাদেশের অহংকর, গর্ব। যেসব সদস্য দেশের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন তারা আমাদের গর্ব। আমরা জানি আল্লাহর কাছে শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আমরা যারা কর্মজীবী রয়েছি তাদের দায়িত্ব হবে সব শহীদ যে যেখানে থাকুক না কেন তাদের সহায়তা করা। আমার পক্ষ থেকে ব্যাটালিয়ন পরিচালক বা সিওদের অনুরোধ থাকবে আমার কোনো শহীদ পরিবার আপনাদের কাছে উপকার না পেলেও অন্তত আন্তরিকতার কমতি না থাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।

এম খুরশীদ হোসেন আরও বলেন, আজ আমরা যারা জীবিত রয়েছি, তারা কে কোন অবস্থায় মারা যাবো কেউ জানি না। কিন্তু শহীদ পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের অনুভূতি যদি বুঝতে পারি তাহলে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবো।

শহীদ পরিবারের অনেক সদস্য পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করছে জানিয়ে র‍্যাব প্রধান বলেন, শহীদ পরিবারের সন্তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব থাকবে, আমাদের মাধ্যমে যদি কর্মসংস্থান হয় সেটা অবশ্যই করবো। শহীদদের অনেকের স্ত্রী রয়েছে, তাদেরও যদি কর্মের ব্যবস্থা করা যায় সেটাও আমরা সবাই চেষ্টা করবো।

চাকরিজীবনে আমরা যতটুকু মানুষের জন্য উপকার করে যেতে পারি সেটাই কিন্তু সব সেটিসফেকশন, আত্মতৃপ্তি। যখন অবসরে চলে যাবো তখন এ সুযোগ থাকবে না।

র‍্যাব কর্মকর্তাদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে এলিট ফোর্স প্রধান বলেন, র‍্যাবের এডিজি, অধিনায়ক বা কোনো ক্যাম্পে গিয়ে আমাদের শহীদ পরিবারের সদস্যদের এমন অনুভূতি না জাগে যে, আজ আমার বাবা-স্বামী বেঁচে নেই কিন্তু র‍্যাবের কাছে এসে সহায়তা পেলাম না। সবাইকে বলবো শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না। তারা যেন মনে কষ্ট না পায়। কোনো ব্যাটালিয়নে গিয়ে যদি কেউ উপকার না পান কষ্ট করে ঢাকায় চলে আসবেন, আমরা তাদের সহায়তার চেষ্টা করবো। আর শহীদ পরিবারের সদস্য যারা আমাদের কাছে দাবি-দাওয়া রেখেছেন তাদের বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

ডিজি বলেন, দরবারের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। আমাদের অন্য চিন্তা করলে চলবে না। ভয়ের কোনো কাজ নেই। আমাদের একটাই আস্থা আমরা এ দেশের সন্তান, এ দেশের জন্য কাজ করি। সবার মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে র‍্যাব মানুষের ভরসা, নিরাপত্তা ও ভরসার প্রতীক। আমি চাই, আমাদের সব সদস্য মানুষের মধ্যে ভরসা-আস্থা আরও বাড়াতে কাজ করবে। আমরা যারা সরকারি কর্ম করি, যাদের ইউনিফর্ম আছে তাদের পরিবার সিকিউরিটিতে আছে। কিন্তু সমাজের বাস্তব চিত্র আলাদা।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/rab-3-20230320165326.jpg

এলিট ফোর্সের প্রধান এম খুরশীদ হোসেন বলেন, আমি বলবো অসহায় মানুষ আমাদের কাছে আসবে। তাদের কথা শুনবো, আইনের মধ্য থেকে সহায়তা করবো। তবে নিয়ত ঠিক থাকতে হবে। আমরা যেন তার সমস্যাটা পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না চাই।

মানুষ যাতে মনে করে র‍্যাবের কাছে পৌঁছালে আমি আমার কষ্টের কথা বলতে পারি, অভিযোগের কথা বলতে পারি, র‍্যাব আমাদের কথা শোনে। আমি কিন্তু বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি র‍্যাবের সিওরা সাধারণ মানুষের কথা শুনলেও ক্যাম্প কমান্ডাররা কথা শোনেন কম। আজ সরাসরি বলে দিই, শুধু আমাদের শহীদ পরিবার না বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তের মানুষ ক্যাম্পে যাবে, অবশ্যই ক্যাম্প কমান্ডার তার কথা শুনবেন। পুনরায় কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনতে চাই না। আপনি এ দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলেন, তাই সাধারণ মানুষকে সার্ভিস দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি যেসব জায়গায় কাজ করেছি, সব জায়গায় সাধারণ মানুষের কথা শুনেছি। আমি এখনো মানুষের কথা শুনি। থানায় বা এসপিকে ফোন করে বলে দিই। এতে যদি কারও উপকার হয়। প্রয়োজনে ক্যাম্প কমান্ডাররা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বা দেখা করার সময় ঠিক করে দেবেন। এসময় অবশ্যই ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে। এটা সিও’রা নিশ্চিত করবেন। আমি কিন্তু পুনরায় এ অভিযোগ শুনতে চাই না।

আমরা শাসক না, সেবক হতে চাই। আমি চাই যারা অসহায় মানুষ, বিপদগ্রস্ত মানুষ আমাদের আন্তরিকতা, ক্ষমতা দিয়ে তাদের সহায়তা করবো। যত দিন চাকরি আছে ততদিন মানুষকে সহায়তা করে যেতে হবে।

টিটি/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।