মালয়ালম সিনেমার জীবন্ত কিংবদন্তি মোহনলাল
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন কিছু তারকা আছেন যারা শুধু জনপ্রিয় নয়, বরং তারা হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণা। মোহনলাল তেমনই এক নাম। যিনি কেবল দক্ষিণ ভারতের নন, গোটা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার অভিনয়শৈলী, স্বাভাবিকতা, সংলাপপ্রকাশের ভঙ্গিমা এবং চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার দক্ষতা তাকে করে তুলেছে অনন্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
আজ গুণী এই শিল্পীর জন্মদিন। ১৯৬০ সালের এই দিনে কেরালার পাথানামথিট্টা জেলার এলানথুর নামক ছোট্ট এক গ্রামে জন্ম তার। এই অভিনেতার পুরো নাম মোহনলাল বিশ্বনাথন নাইর।
-
অভিনেতার বাবা বিশ্বনাথন নাইর ছিলেন একজন আইনজীবী এবং সরকারি কর্মচারী, মা সান্তাকুমারী ছিলেন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই মোহনলাল ছিলেন প্রাণচঞ্চল ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, থিয়েটার ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি বরাবরই এগিয়ে ছিলেন।
-
১৯৭৮ সালে ‘ঠিরানোটাম’ নামে একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রঙিন দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেন মোহনলাল। তবে সেই সিনেমাটি মুক্তি পায়নি।
-
পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ‘মানজিল বিরিঞ্জু পুক্কাল’ সিনেমার মাধ্যমে তার মূলধারার যাত্রা শুরু হয়, যেখানে তিনি একজন খল চরিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হয় ইতিহাস। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি নিজেকে একজন নির্ভরযোগ্য, বহুমুখী অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করেন।
-
আশির দশকেই তিনি ‘পুথেন পানাম’, ‘রাজাভিন্তে মাকান’, ‘চিত্রম’, ‘নমক্কু পারকান মুন্ডিরিতোপুকাল’ এর মতো জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন, যেগুলো তাকে এনে দেয় সুপারস্টার খ্যাতি।
-
মোহনলালের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তার চরিত্র বাছাইয়ের কৌশল ও অভিনয়ের ব্যাপ্তি। তিনি কখনো সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ, কখনো উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, আবার কখনো আধ্যাত্মিক গুরু বা যুদ্ধবিমান চালক হয়ে পর্দায় আবির্ভূত হয়েছেন।
-
‘ভারাভেল্পু’, ‘কিরীদম’, ‘স্পাদিক’, ‘দাশারথম’, ‘ভানাপ্রস্তম’, ‘নরান’, ‘দৃশ্যম’, কিংবা সাম্প্রতিক ‘মারাক্কার’ প্রতিটি ছবিতেই তিনি ভিন্ন রূপে, ভিন্ন আবেগে হাজির হয়েছেন।
-
তার ‘ভানাপ্রস্তম’ কানে চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল, আর এটি ভারতের পক্ষ থেকে অস্কারে পাঠানো হয়েছিল। ‘দৃশ্যম’ সিনেমাটি মালয়ালম ছাড়াও হিন্দি, তেলেগু ও তামিল ভাষায় রিমেক হয় এবং প্রতিটি সংস্করণেই সিনেমাটির হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মূল কৃতিত্ব মোহনলালের অসামান্য অভিনয়েরই ফল।
-
চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী মোহনলাল পেয়েছেন পদ্মশ্রী (২০০১) ও পদ্মভূষণ (২০১৯) সম্মাননা। এছাড়া ৯টি কেরালা স্টেট অ্যাওয়ার্ড এবং অসংখ্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে। তিনি কেরালা পুলিশের অনারারি লেফটেন্যান্ট কর্নেল, যা একজন বেসামরিক নাগরিক হিসেবে বিরল সম্মান।
-
মোহনলাল শুধু অভিনয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি প্রযোজনা, গান, মার্শাল আর্ট, ও থিয়েটারেও কাজ করেছেন। কুচিপুড়ি নৃত্যেও তার রয়েছে আগ্রহ। তিনি একজন প্রফেশনাল ম্যাজিক শিল্পী এবং ভারতীয় যুদ্ধকলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দেশপ্রেমিক, সমাজসচেতন এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে তার বেশ খ্যাতি রয়েছে।
-
১৯৮৮ সালে কেরালার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক কেএ বালাচন্দ্রনের মেয়ে সুচিত্রাকে বিয়ে করেন তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতা। প্রণব ও বিশ্বা নামের দুই সন্তান রয়েছে তাদের।
-
অভিনেতার ছেলে প্রণবও বর্তমানে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। বাবার মতোই প্রতিভাবান অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।