আগামীতে মাত্র ২ শতাংশ কনটেইনার-কার্গো যাচাই হবে: আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৫:৪৮ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

আগামীদিনে দেশে আমদানি হওয়া কনটেইনার ও কার্গোর মাত্র ২ শতাংশ যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, আধুনিক সফটওয়্যার ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোন কোন কনটেইনার পরীক্ষা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করা হবে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরাম আয়োজিত বাণিজ্য সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, বিশ্বের কোথাও সব কনটেইনার পরীক্ষা করা হয় না। অটোমেশন ও আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কনটেইনার চিহ্নিত করা হবে। এতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের সুযোগ কমে আসবে এবং দুর্নীতির পথ বন্ধ হবে।

তিনি জানান, সফটওয়্যারই নির্ধারণ করবে কোন কনটেইনার যাচাই হবে। যে ২ শতাংশ কনটেইনার পরীক্ষা করা হবে, সেগুলোরও অডিট করা হবে। এর ফলে মাল খালাসের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে এবং ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ উভয়ই সাশ্রয় হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রাষ্ট্র পরিচালনা প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, সরকারের ক্ষমতার চেয়ে জনগণের ক্ষমতাই রাষ্ট্রের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের ক্ষমতার মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখা। বিএনপি জনগণের ক্ষমতার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়।

তিনি আরও বলেন, কেবল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেই রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয় না। গণতন্ত্র মানে হলো সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এজন্য ‘ডি-রেভুলেশন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ভেঙে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কের ধরন বদলানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত ছয় মাস ধরে বিভাগভিত্তিক বাণিজ্য সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এই সংলাপ ছিল অন্যতম শেষ ধাপ। কেবল ঢাকা বিভাগের সংলাপ বাকি রয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কাজে রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই চর্চা বদলে রাজনীতিবিদদেরই ব্যবসায়ীদের কাছে আসার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য।

আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের সুবিধা বাড়াতে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যুরোক্রেসি কমিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করার ঘোষণাও দেন আমীর খসরু।

তিনি বলেন, অটোমেশন ছাড়া ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি সম্ভব নয়। সব খাতে অটোমেশন চালু করতে একটি সুপারভাইজারি কমিটি গঠন করা হবে। কনটেইনার আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অনুমোদন ও প্রক্রিয়া ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সম্পন্ন করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে প্রতিটি অঞ্চলে স্কিল উন্নয়ন সেন্টার স্থাপনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন ভবন নির্মাণ না করে বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করা হবে। এসব কার্যক্রমে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ব্যবসা সহজ করার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা বলার সুযোগ তৈরি করার আহ্বানও জানান তিনি।

রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের বড় সমস্যা হলো ব্যাংক সহায়তার অভাব। তিন পার্বত্য জেলায় ইপিজেড স্থাপন করা হলে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলতানা নূরজাহান রোজী বলেন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

চেম্বারের সাবেক সভাপতি আলী আহম্মদের সভাপতিত্বে সংলাপে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও শিল্পপতি বক্তব্য দেন।

এমআরএএইচ/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।