খালেদার চিকিৎসার ব্যাপারে যা বলছেন ছোট দলের বড় নেতারা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তার দলের নেতাদের পাশাপাশি সমমনা বিভিন্ন রাজনেতিক দলের নেতারাও উদ্বিগ্ন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট শরিক ছাড়াও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা চান, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য সরকার যেন দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
যদিও দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদার পরিবারের তরফ থেকে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি দিতে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে রোববার (৯ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জাগো নিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা করণীয়, যে দেশে চিকিৎসা দরকার সেটাই করা উচিত এবং কর্তব্য। জামিনে মুক্তি দিয়ে খালেদার রাজনৈতিক স্বাধীনতা সামনে এলে, সেটা ভালো হয়।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে না। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হলো মুক্তি। মুক্তি দিলে তিনি কোথায় চিকিৎসা করাবেন সেটা তার স্বাধীনতা।’
ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ‘অতীতের প্রতিহিংসা ও ভুল স্মরণে না রেখে সরকারকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। মানসিক শক্তি না থাকলে সুস্থ হওয়া যায় না। সেই জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান করছি, ছাত্রদের পাশাপাশি খালেদা জিয়াকেও মুক্তি দেয়া হোক। তার কিছু হয়ে গেলে পরে আক্ষেপ করতে হবে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট রাজনীতিক খালেদা জিয়ার জীবন সুরক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যতদূর জেনেছি বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কারাবন্দি হওয়ার আগে থেকেই তার বেশ কিছু অসুখ ছিল। প্রায় দুই বছর কারাবন্দি থাকায় সেগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক। এই অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং একজন বীর উত্তমের স্ত্রী হিসেবে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।’
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় সরকারের উচিত দ্রুত সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মানবিক কারণেই তার সুচিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকারেরই কল্যাণ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অসুস্থতাকে যেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছিল, খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও সরকারকে একই রকম উদ্যোগ নিতে হবে। তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে অতি দ্রুত বিদেশে নেয়ার দায়িত্বও সরকারের।’
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি (একাংশ) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘দেশনেত্রীকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদানের এখন যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। যেহেতু তিনি অসুস্থ আক্রান্ত, সেহেতু তার ওপর থেকে সব শর্ত প্রত্যাহার করা উচিত, যাতে তিনি তার ইচ্ছামতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন।’
বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যদি খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি না দেয়, আর আল্লাহ না করুন, তার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে বিএনপি সরকারকে দোষারোপের সুযোগ পাবে। তাই সরকারের উচিত তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া।’
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, ‘গুরতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তার বিদেশ যাওয়ার সকল বাধা অপসারণের দায়িত্ব সরকারের। তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তার পছন্দের বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে দেশবাসী বিশ্বাস করতে চায়।’
গত বছরের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে এলে সরকার দ্বিতীয় দফায় আরও ৬ মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ থেকে মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়।
মুক্তির পর থেকে তিনি থাকছিলেন তার গুলশানের ভাড়াবাসা ‘ফিরোজা’য়। এর মধ্যে গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ মে খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে খালেদার উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৬ মে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন। আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত সম্বলিত নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
পরে রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে, সাজা মওকুফ করে তাকে বিদেশে পাঠানোর কোনো অবকাশ এই ধারায়।
কেএইচ/এমএসএইচ/এইচএ/এমকেএইচ