১৫ লাখ টাকার চেক: এমপির কাছে ক্ষমা চাইলেন সেই যুবলীগ নেতা
১৫ লাখ টাকা ঘুস দিয়েও নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ার অভিযোগ তোলা বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন এবার চট্টগ্রাম- ৮ আসনের সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে এবার তিনি পুরো ঘটনার দায় চাপিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা হুসেইন কবিরের উপর।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) নিজের আইডি থেকে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি নিজের এ অবস্থান জানান।
৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ওই ফেসবুক লাইভে অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন বলেন, আমার প্রিয় নেতা চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের অজান্তে, অজ্ঞাতে ও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার ঘৃণ্য মানসে পরিকল্পনা করে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির আমাকে আসন্ন সোনাকানিয়া ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক এনে দেবে বলে নগদ টাকা ও চেক গ্রহণ করেছেন। হুসেইন কবির অপকৌশল করে প্রাপক হিসেবে মোসলেম উদ্দিনের নাম লিপিবদ্ধ করে নেন। চেক ও নগদ টাকা গ্রহণের পূর্ব থেকে তিনি নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেবেন বললেও, মনোনয়ন বোর্ডে আমার নাম না পাঠানোয় আমি রাগান্বিত হই।
তিনি আরও বলেন, আমি জানতে পারি... এ কাজে প্রিয় নেতা মোসলেম উদ্দিনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মোসলেম উদ্দিনের নাম আসায় আমি অত্যন্ত অনুতপ্ত ও দুঃখিত। যেটি আমার অজান্তে এবং অজ্ঞতার কারণে হয়েছে। আমি জননেতা মোসলেম উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আল্লাহ হাফেজ।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক আইডিতে কামাল উদ্দিন লিখেছিলেন, ‘আমি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট অ্যান্ড অডিশনাল পিপি, চট্টগ্রাম জজ কোর্ট ও সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগ। আসন্ন ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেবেন বলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা জনাব আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপির নাম দিয়ে আমার কাছ থেকে পনের লাখ টাকার চেক নিয়েছেন।’
‘কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া তো দূরে থাক, কেন্দ্রে আমার নামটি পর্যন্ত পাঠায়নি। এখন আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে আমি তৃণমূলের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হবো এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হবো। পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ’—লেখেন কামাল উদ্দিন।
লাইভের পর এ বিষয়ে জানতে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির জাগো নিউজকে বলেন, কামাল উদ্দিন একজন বিকৃত মানসিকতার লোক। আপনি তার কাছের লোকজনের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। তিনি কখন কী বলেন, ঠিক নেই। সকালে এক কথা বলেন, আবার বিকেলে এক কথা বলেন। আমার সঙ্গে গত পাঁচ বছরে তার দেখা হয়নি এবং মোবাইলে পর্যন্ত কথা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি যদি টাকা নিয়ে থাকতাম, তবে কোথায় বসে টাকা বসে টাকা নিয়েছি তার সিসিটিভি ফুটেজ থাকতো। কিন্তু তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। শুধু শুধু তিনি ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এই স্ট্যাটাস দেওয়ায় লোকজনের চাপে তিনি সবার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লাইভে এসে আবার তিনি আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। ডিজিটাল আইনে একটি মামলাও দায়ের করেছি। এই মামলা তদন্তাধীন আছে। আইনানুগভাবে আমি তার ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবো।
মিজানুর রহমান/এমএইচআর/এএসএম