মৌলভীবাজার-৩

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে মা-মেয়ে, মাঠে আছেন এমপি নেছার

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৌলভীবাজার থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২২
সৈয়দা সায়রা মহসীন, সৈয়দা সানজিদা মহসীন ও নেছার আহমদ

মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-৩ আসন। আওয়ামী লীগের ঘাঁটিখ্যাত এ আসনটির নেতৃত্বে ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে তিনি এই এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। ’৯১-এ বিরোধীদলীয় চিফ হুইপও ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আসনটি হাতছাড়া হয় আওয়ামী লীগের। সিলেট অঞ্চলের আরেক জনপ্রিয় নেতা বিএনপির এম সাইফুর রহমানের কাছে হারেন আজিজুর রহমান। ২০০৯ সালে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন সৈয়দ মহসীন আলী। এরপর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসনটি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে আসনটি হাতছাড়া করেই মাশুল দিতে হবে, এমনটাই মনে করেন স্থানীয় রাজনীতি সচেতনরা। তারা বলছেন, আগামীতে এই আসনে নির্বাচনে ফ্যাক্টর প্রয়াত মহসীন আলীর পরিবার এবং প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের পরিবার। দুই জনপ্রিয় নেতারই শক্ত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার আছে এ আসনে। তাই প্রার্থী বাছাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন জনপ্রিয় নেতা প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসীন ও মেয়ে সৈয়দা সানজিদা মহসীন। পাশাপাশি বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদও আছেন মাঠে।

এদিকে, বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান।

মনোনয়নের বিষয়ে সাবেক এমপি সৈয়দা সায়রা মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমার স্বামী প্রয়াত মহসীন আলী নেতৃত্বে ছিলেন। তার অবর্তমানে উপ-নির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। এলাকার মানুষের সঙ্গে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যেটা এখনো আছে। আমি সব সময়ই এলাকায় যাই। মানুষের খোঁজ-খবর রাখি। তাদের কথা শুনি। মানুষের প্রত্যাশা আমি যেন মনোনয়ন চাই, সেজন্য চাইবো। বাকি সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।’

যুবলীগ নেত্রী ও প্রয়াত মহসীন আলীর মেয়ে সৈয়দা সানজিদা মহসীনও মনোনয়ন চাইবেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন চাইবো। আশি করি, আমাদের বিষয়টি নেত্রী বিবেচনা করবেন। কারণ এখনকার এমপিদের অবস্থা তো এলাকায় গিয়ে আপনারা বুঝতেই পারছেন। আমার আব্বার ত্যাগ আছে দলের জন্য, আমাদের সম্পৃক্ততা আছে দলে। এখনো কাজ করছি। করোনা ও বন্যায় মানুষের পাশে ছিলাম। সে জায়গা থেকে আশা করি আমরা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ পাবো।’

বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আগামীতেও মনোনয়ন চাইবো। কারণ, আমি এলাকার জন্য যতটুকু করেছি, এতে আমি নিজে সন্তুষ্ট। আমার বাকি উন্নয়নকাজ সমাপ্ত করতে দলের মনোনয়ন ও জনসমর্থন চাইবো।’

তিনি বলেন, আমাদের এখানে মেডিকেল কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু প্রজেক্ট চিন্তা করেছি। নেত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা রাখি সবগুলোই ক্রমান্বয়ে হবে।

মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৭ নম্বর আসন মৌলভীবাজার-৩। এখানে ৩ লাখ ৯১ হাজার ২৬৮ জন ভোটার। ১ লাখ ৯৭ হাজার ১২২ পুরুষ ও ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৪৬ নারী ভোটার।

বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেছার আহমদ পান ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৯ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির এম নাসের রহমান পান ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯৫ ভোট।

১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ মহসীন আলী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২১ ভোট পান। বিএনপির এম সাইফুর রহমান ধানের শীষে পান ১ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫ ভোট।

৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) বিএনপির এম সাইফুর রহমান পান ১ লাখ ৮ হাজার ৫১৩ ভোট ও আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান পান ৯৫ হাজার ৩১৯ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) বিএনপির এম সাইফুর রহমান ৮৪ হাজার ২৯২ ভোট পান। আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান পান ৬৩ হাজার ১৭৭ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান পান ৫৫ হাজার ৯৭৭ ভোট। জাতীয় পার্টির গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী পান ৩৮ হাজার ৫২৮ ভোট।

এসইউজে/এএসএ/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।