সিলেট-২

তৎপরতা নেই নেতাদের, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৪

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সিলেট থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ২৬ অক্টোবর ২০২২
শফিকুর রহমান চৌধুরী, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আখতারুজ্জামান জগলু চৌধুরী ও মুহিবুর রহমান

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে প্রায় সব আসনে। ব্যতিক্রম সিলেট-২। বছরখানেক বাকি থাকলেও এখানে নেই কোনো নির্বাচনী আমেজ। বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর এ আসনে দলটি তাদের অবস্থান ধরে রাখলেও পিছিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নেতারা এলাকামুখী নন, দলীয় কর্মসূচিও কম।

স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা বলছেন, নেতারা কেউ এলাকায় আসেন না। আর নির্বাচনী সেই আমেজ এখানে এখনো সৃষ্টি হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ গেলো দুবার আসনটি জোটের স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। বিএনপিও গেলো নির্বাচনে জোটকে দিয়েছে। যে কারণে দলীয় প্রার্থীরা আগে থেকেই মাঠে নেই। জোট গঠন ও নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে তারা হয়তো মাঠে নামবেন।

দলীয় নেতাকর্মী ও রাজনীতি সচেতনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট-২ আসন থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এই আসনের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দুবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত মুহিবুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান জগলু চৌধুরী।

পাশাপাশি সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ইয়াহইয়া এবং বর্তমান এমপি গণফোরামের মোকাব্বির খান তো আছেনই। এছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ইলিয়াস আলীর পত্নী তাহসিনা রুশদীর (লুনা) বা তার ছেলে আবরার ইলিয়াস।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমি গেলোবারও মনোনয়ন চেয়েছি, এবারও চাইবো। ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বনাথ, ওসমানী নগরের প্রত্যেকটা ইউনিয়ন ও গ্রামে আমার একটা ভিত্তি আছে। ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার কারণে এখানে আমার অসংখ্য কর্মী বাহিনী আছে। মানুষের সঙ্গে সম্পর্কও নিবিড়। দল যদি মনোনয়ন দেয়, আমি এখানে ভালো করবো। দলমত নির্বিশেষে এখানে আমার একটা অবস্থান আছে।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, তিনিও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন, এলাকায় সময়ও দিচ্ছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নুনু মিয়া বলেন, আমাদের এখানে পৌরসভা নির্বাচন চলছে। এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই ভোটের পর বোঝা যাবে জাতীয় নির্বাচনে আমাদের ভাগ্যে কী আছে! আমরা চেষ্টা করছি, দলীয় নেতাদের মধ্যকার মান-অভিমান দূর করে ঐক্যবদ্ধ রাখতে।

বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৩০ নম্বর আসন সিলেট-২। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮০ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৪৫।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আসনটি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। আওয়ামী জোট ও বিএনপি জোটের হাতেও ছিল একবার করে। যে কারণে ভোটের হিসাব জটিল। বিভক্ত সমর্থক ও ভোটারদের এক করে জয় নিশ্চিত করা বেশ কঠিন।

এই আসনটিতে এক সময়ে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকলেও জোটকে ছেড়ে দেওয়ায় সেটা এখন আর নেই। নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করে, তারা অনেকে নিষ্ক্রিয়। ভোটাররাও বিভক্ত হয়ে গেছেন। কেউ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করেছেন। যার কারণে দলের অনেকের কাছে হয়ে গেছেন নেতিবাচক। আবার কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে পেয়েছেন বিদ্রোহী তকমা। কেউ গেছেন চুপসে।

অথচ, বিএনপি তার অবস্থান ধরেই রেখেছে। বরং তাদের সমর্থন বেড়েছে। পাশাপাশি এই আসনের সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার কারণে তার পরিবারের প্রতি এলাকার মানুষের সহানুভূতি কাজ করে। তারা একচেটিয়া ইলিয়াস পরিবারকেই ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। এমনকি ওই পরিবারের সমর্থন নিয়েও যে কেউ এখানে পাস করবে বলে দাবি ভোটারদের।

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুকাব্বির খান ৬৯ হাজার ৪২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান পান ৩০ হাজার ৪৪৯ ভোট। সেসময় এই আসনে বিএনপির তাহসিনা রুশদীর মনোনয়ন বাতিল হয়।

১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ইয়াহইয়া লাঙল প্রতীকে ৪৮ হাজান ১৫৭ ভোট পান। স্বতন্ত্র থেকে মুহিবুর রহমান আনারস প্রতীকে পান ১৭ হাজার ৩৮৯ ভোট।

৯ম সংসদ নির্বাচন (২০০৮) আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির ইলিয়াস আলী পান ১ লাখ ৬ হাজার ৪০ ভোট।

৮ম সংসদ নির্বাচন (২০০১) বিএনপির ইলিয়াস আলী ১ লাখ ৩ হাজার ৪৬০ ভোট পান। আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান পান ৫৫ হাজার ২৯১ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান ৪২ হাজার ২৬৬ পেয়ে নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টির মকসুদ ইবনে আজিজ লামা পান ৩৯ হাজার ৪৪ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯১) জাতীয় পার্টির মকসুদ ইবনে আজিজ লামা পান ৩৯ হাজার ১৫ ভোট। লুৎফর রহমান খান পান ২২ হাজার ৮৭ ভোট।

এসইউজে/এএসএ/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।