ডিজেল ম্যাংগো আরমানি কী নেই কেরানীগঞ্জে


প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ১২ জুন ২০১৭

আমেরিকার লি লেভিজ, ডিজেল, ব্লু কালেকশন, ইতালির ভারসেস, আরমানি, চীনের কসমোসহ বিশ্বের খ্যাতনামা হুগো বস, ম্যাংগো, জারা, ফুং, এইচ অ্যান্ড এম, নেক্স- কী না পাওয়া যায় এখানে।

বিশ্বের সব নামি-দামি ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে কেরানীগঞ্জের পাইকারি পোশাক মার্কেটে। জিন্স প্যান্ট, পাজামা-পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট, শার্ট, ফতুয়া, বোরখা ও শীতবস্ত্রসহ বাহারি সব পণ্যের সমাহার এখানে। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিশু-বৃদ্ধা সব বয়সের ফ্যাশনেবল পোশাক তৈরি করেন এখানকার কারিগররা।

রাজধানী সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার তীরে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নের গার্মেন্টপল্লীতে পাওয়া যাচ্ছে সচরাচর না পাওয়া এসব পণ্য। এখানে আলম টাওয়ার, শহিদুল আলম, মশিউর আলম, ইসলাম প্লাজা, সেঞ্চুরি কমপ্লেক্স, আশা কমপ্লেক্স, জিলা পরিষদ, মাহবুবুল আলম মার্কেট, মসজিদ মার্কেট, হান্নান মার্কেট, এসআর শপিংমল, খাজা মার্কেট, বাবুল ঢালী মার্কেট, আনোয়ার সুপার মার্কেট, লায়ন সুপার মার্কেট, জিঞ্জিরার ফ্যামিলি শপিংমলসহ রয়েছে আরও কয়েকটি মার্কেট। যেখানে পোশাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী। আর শ্রমিক-কর্মচারী আছেন দুই লাখের ওপরে।

pic

দামে সস্তা আর মানে ভালো হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে কেরানীগঞ্জের পোশাকের চাহিদাও বেশ। ফলে ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল সব ব্যবসায়ীই পাইকারি পোশাক কেনেন কেরানীগঞ্জ থেকে। দেশের তৈরি পোশাকের চাহিদার ৮০ শতাংশই সরবরাহ হয় এই পল্লী থেকে।

পাইকারি মার্কেট হলেও কেরানীগঞ্জের দোকানগুলোতে খুচরা পোশাকও বিক্রি হয়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানিরা বান্ডেল বাঁধা পোশাকের পাশাপাশি বাহারি পোশাক প্রদর্শনও করেন দোকানের ভেতরে। প্রদর্শন করা সেই পোশাকগুলোতে শোভা পায় নামি-দামি ব্র্যান্ডের স্টিকার। স্টিকার দামি ব্র্যান্ডের হলেও দাম হাতের নাগালে। মাত্র ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করে এসব ব্র্যান্ডের শার্ট, টি-শার্ট, জিন্স কেনা যায়।

পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের পোশাকেও বিপুল সমারোহ কেরানীগঞ্জের মার্কেটে। তবে নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে দামি ব্র্যান্ড থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় আকর্ষণীয় নামের ওপর। যেগুলো বেশির ভাগই ভারতীয় সিরিয়াল অথবা সিনেমার নাম অনুসারে। পাখি, কিরণমালা, বাজিরাও মাস্তানি’র পাশাপাশি এবারের ঈদ কালেকশনে যুক্ত হয়েছে ‘হুররাম ও বাহুবলী ২’।

pic

রাজধানীর নামি-দামি মার্কেট মাতানো এসব পোশাকের মূল জোগাদাতা কেরানীগঞ্জ পোশাকপল্লী। অভিজাত মার্কেটগুলোতে আকাশছোঁয়া দামে এসব পোশাক বিক্রি হলেও কেরানীগঞ্জে এসব পোশাকের দাম ৫০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে। 

‘বৈশাখী ফ্যাশন’র বিক্রেতা জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের এখানে যেসব পোশাক রয়েছে তা সবই এক্সপোর্ট কোয়ালিটির। আমরা টি-শার্ট, শার্ট ও বাচ্চাদের পণ্য বেশি বিক্রি করি। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজাসহ ফার্মগেট, মিরপুরের বিভিন্ন অভিজাত বিপণি-বিতানে এখান থেকে পণ্য নিয়ে বিক্রি করে।

কেরানীগঞ্জের গুদারাঘাট এলাকায় ‘সুজন গার্মেন্টস’ বিক্রি করছে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ব্র্যান্ডের জিন্স প্যান্ট। কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিক্রিয় কর্মীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে যেসব প্যান্ট আছে তার সবই তৈরি কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায়। এখানে অর্ডার দিলে তারা বানিয়ে দেয়। বিদেশি সব ব্র্যান্ডের পোশাক হুবহু তারা বানায়। কেই দেখলে বুঝতেই পারবে না এ দেশের তৈরি।

pic

দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একসঙ্গে ছয় পিস প্যান্ট বিক্রি করি। এর কম বিক্রি করি না। মান অনুযায়ী প্রতি পিসের দাম পড়ে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া নরমাল প্যান্ট বিক্রি করি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।  

তবে কারও ব্র্যান্ড নকল করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ শেখ।

তিনি বলেন, অভিযোগটি সত্য নয়। আমরা জেনুইন ব্যবসা করি। আমাদের এখানে অনেক ব্যবসায়ী ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যের স্যাম্পল এনে পোশাক তৈরি করেন। এগুলোর মান খুবই ভালো। দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষের তৈরি পোশাকের চাহিদা এখান থেকে মেটানো হয়।

এসআই/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।