এশিয়ান কাপ বাছাই
ঘরেই সর্বনাশ বাংলাদেশের, ভরাডুবি দক্ষিণ এশিয়ার
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের গ্রুপিং যখন হয়েছিল তখন বাংলাদেশ দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা বলেছিলেন, তার বেশি নজর থাকবে তিনটি হোম ম্যাচের ওপর। এই তিন ম্যাচে ভালো কিছু করতে পারলে বাছাই পর্ব টপকে সৌদি আরবের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে।
বাস্তবতা হলো, ঘরের তিন ম্যাচের প্রথম দুটিতেই ডাব্বা মেরেছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরের পর হংকংয়ের কাছে হারের পরই কার্যত শেষ হয়ে যায় ৪৫ বছর পর এশিয়ান কাপে খেলার স্বপ্ন। সমীকরণে যে সম্ভাবনা টিকে ছিল, তা শেষ হয়ে যায় মঙ্গলবার হংকংয়ের বিপক্ষে ড্র করার পর এবং একই দিন সিঙ্গাপুরের কাছে ভারত হেরে যাওয়ায়।
অনেকদিন পর এশিয়ান কাপ বাছাই নিয়ে মানুষের প্রত্যাশার পারদ ছিল অনেক ওপরে। বিশেষ করে হামজা চৌধুরী ও শামিত সোম যখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট তৈরি করে লাল-সবুজ জার্সিতে খেলা শুরু করেন। এর মধ্যে হামজা চৌধুরীকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ ও প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বি।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বাংলাদেশের জার্সিতে যে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন সেখানে রাখতে পেরেছেন নিজের যোগ্যতার প্রমাণ। পাঁচ (ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ সহ) ম্যাচে দুটি গোলও করেছেন হামজা।
কানাডা প্রিমিয়ার লিগে খেলা শামিত সোম যোগ হওয়ায় প্রত্যাশার জায়গাটা আরো বড় হয়েছিল। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ পড়ে থাকে আগের জায়গাতেই। হামজা-শামিতদের নিয়েও দুই ম্যাচ হাতে থাকতেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ।
নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে হোমম্যাচ ও আগামী বছর মার্চে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের মিশন। ১৯৮০ সালে সালাউদ্দিন-চুন্নুদের বাংলাদেশ সর্বশেষ এশিয়ান কাপ খেলেছিল। এরপর বাংলাদেশ যতবারই বাছাইয়ে খেলেছে ততবারই বিদায় নিতে হয়েছে। সেই ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় এবার যোগ হলো হামজা-শামিতদের নাম।
বাংলাদেশের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, শেষ ম্যাচ দুটি জেতা। তাহলে ব্যর্থতার ঘা-য়ে কিছুটা হলেও স্বস্তির মলম পড়বে। বিশেষ করে নভেম্বরে ভারতকে হারাতে হবে- এমন প্রস্তুতিই নিতে হবে বাংলাদেশকে। সব হারানোর পরও ভারতকে হারাতে পারলে কথা বলার মতো সুযোগ থাকবে ফুটবলারদের।
শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে ড্র করে বাংলাদেশের বাছাইয়ের মিশন শুরু হয়েছিল গত মার্চে। হামজার অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশ। দেশের মানুষের প্রত্যাশাও বেড়েছিল। এরপর শামিত সোম আসলেন। পরে আসলেও ফাহামিদুল। বাংলাদেশের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না।
ভারতের মাটিতে ভারতকে রুখে দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাররা ঘরের মাঠে হেরে যায় সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বিপক্ষে। ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের প্রথম দুটিতেই সব পয়েন্ট হারিয়ে বসে ক্যাবরেরার দল। অথচ একটি ম্যাচ জিতলে চূড়ান্ত পর্বে ওঠার সম্ভাবনা টিকে থাকতো।
এবারের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভরাডুবি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। চার রাউন্ড শেষে কিঞ্চিত সম্ভাবনা আছে কেবল শ্রীলংকার। বাকি দলগুলোর বিদায় নিশ্চিত হয়েছে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই। ফিলিপাইন, তাজিকিস্তান ও পূর্ব তিমুরের সাথে ‘এ’ গ্রুপে ছিল মালদ্বীপ। চার ম্যাচের সবগুলো হেরে বিদায় নিয়েছে তারা। ‘বি’ গ্রুপে লেবানন, ইয়েমেন ও ব্রুনাইয়ের সাথে আছে ভুটান। চার ম্যাচের তিনটি হেরে ও একটি ড্র করে বিদায় নিয়েছে ভুটান।
হংকং ও সিঙ্গাপুরের সাথে ‘সি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ ও ভারতের একই দশা। বিদায় দুই দলেরই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতই বেশি এশিয়ান কাপ খেলেছে। গ্রুপে অন্যতম ফেবারিট থাকা ভারতেরও শেষ দুই ম্যাচ শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। পাকিস্তান ‘ই’ গ্রুপে ছিল সিরিয়া, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের সাথে। চার ম্যাচ শেষে দুই পয়েন্ট পেয়েছে পাকিস্তান। বিদায় নিশ্চিত হয়েছে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই।
নেপাল ‘এফ’ গ্রুপে খেলছে ভিয়েতনাম, লাওস ও মালয়েশিয়ার সাথে। চার ম্যাচের চারটি হারায় বিদায় নিয়েছে নেপাল। সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখা একমাত্র দল শ্রীলংকা। চার ম্যাচ শেষে দেশটি আছে তৃতীয় স্থানে। ‘ডি’ গ্রুপে নেপাল আছে তুর্কমেনিস্তান, থাইল্যান্ড ও চাইনিজ তাইপের সাথে। শ্রীলাংকার পয়েন্ট ৬। কাগজ-কলমে সম্ভাবনা টিকে থাকলেও বাস্তবে সেভাবে নেই। তাদের শেষ দুই ম্যাচ থাইল্যান্ড ও চাইনজি তাইপের বিপক্ষে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঁচবার এশিয়ান কাপ খেলেছে ভারত। ১৯৬৪ সালে দেশটি ফাইনালও খেলেছে। ২০১৯ ও ২০২৩ সালে টানা দুইবার চূড়ান্ত পর্বে খেলা ভারত এবার ছিটকে পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই।
চারটি করে ম্যাচ শেষে ‘সি’ গ্রুপের অবস্থা
|
দেশ |
ম্যাচ |
জয় |
ড্র |
হার |
গোল |
পয়েন্ট |
|
হংকং |
৪ |
২ |
২ |
০ |
৬/৪ |
৮ |
|
সিঙ্গাপুর |
৪ |
২ |
২ |
০ |
৫/৩ |
৮ |
|
বাংলাদেশ |
৪ |
০ |
২ |
২ |
৫/৭ |
২ |
|
ভারত |
৪ |
০ |
২ |
২ |
২/৪ |
২ |
আরআই/আইএইচএস