ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২৩

রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনায়, মাঠ-ঘাটে ও আনাচে-কানাচে গাছের ডালে থোকায় থোকায় সাদা, হলুদ ও সোনালি বর্ণে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতোয়ারা চারপাশ। এসব মুকুলে মধু সংগ্রহে আকুল মৌমাছিরা। গাছে গাছে মুকুলের মনমাতানো মুগ্ধকর দৃশ্য আকৃষ্ট করছে যে কাউকে।

অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলার আম গাছগুলোয় ব্যাপক মুকুল আসায় গতবারের তুলনায় বেশি আম হতে পারে। গত মৌসুমে শিলাবৃষ্টির কবলে আমের ক্ষতি হলেও এবার আবহাওয়া ভালো থাকলে ব্যাপক আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন বাগান মালিকরা।

ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা

বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, আম্রপালি, সূর্যপুরী, বান্দিগড়সহ বিদেশি কিং চাকাপাত, নাম দোকমাই, চিয়াংমাই, আলফান শো, রেডপালমারসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছে মুকুল ও ফল ধরেছে। তাই গাছের পরিচর্যা ও পোকা দমনে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষি ও বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা।

আরও পড়ুন: মার্চ-এপ্রিলে আমের পরিচর্যা

পাঁচ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৮৪৪টি আম বাগানেই ধরেছে মুকুল। যার আয়তন প্রায় ৩ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমি। এ ছাড়াও বসতবাড়িসহ মোট ৫ হাজার ৮২ হেক্টর জমির আম গাছে মুকুল হয়েছে। এসব গাছ থেকে এবার জেলায় মোট ৪৯ হাজার ১৮৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আম উৎপাদন হতে পারে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক।

ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা

গতবার আবহাওয়ার কারণে আম চাষে কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার গাছে ব্যাপক মুকুল আসায় খুশি বাগান মালিকরা। ঝড়-বৃষ্টি না হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা তাদের। এ ছাড়াও সরকারিভাবে আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরও বেশি লাভবান হবেন বলে জানান আম চাষিরা।

পীরগঞ্জ উপজেলার আম চাষি মো. আহসান হাবিব ডিপজল ২০ একর জমিতে আম্রপালি, সূর্যপুরী, বান্দিগড়সহ বিদেশি কিং চাকাপাত, নাম দোকমাই, চিয়াংমাই, আলফান শো, রেডপালমারসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছের বাগান করেছেন। তার বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ জন শ্রমিক কাজ করে আয় করছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা

আরও পড়ুন: আমের মুকুল ও গুটি ঝরা রোধে করণীয়

বাগানের প্রতিটি গাছেই মুকুল এসেছে। তিনি বলেন, ‘গত বছর তিন দফায় শিলাবৃষ্টি হওয়ায় আমার আম বাগানে প্রায় ৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের চেয়েও এবার গাছগুলোয় ভালো ও বেশি মুকুল এসেছে। আশা করি তেমন ঝড়-বৃষ্টি না হলে ভালো আম হবে। এতে আগের বার যা ক্ষতি হয়েছিল, তা পুষিয়ে নিতে পারবো।’

আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদন করে তেমন লাভবান হতে পারি না। সরকার আম বিদেশে রপ্তানি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিলে আরও লাভবান হতাম। কৃষকরা আরও বেশি আগ্রহী হতেন। আগের তুলনায় ব্যাপক আম চাষ হচ্ছে। সবার বাগান বা গাছের আম একই সময় পাকে। ফলে সব আম একসঙ্গে বাজারে ওঠে। ফলে এত আমের ক্রেতা পাওয়া যায় না।’

ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা

জেলায় সরকারিভাবে আম রপ্তানি ও সংরক্ষণের জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠন গড়ার দাবি জানান আম চাষি আজিজ, খলিল ও রবিউল ইসলাম।

আরও পড়ুন: আমের মুকুল রক্ষায় যা করবেন

এবার যে হারে মুকুল এসেছে, তা ধরে রাখতে পারলে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে গাছে সেচ, আমের মুকুল ও গুটি ঝরা রোধে কীটনাশক স্প্রেসহ ফলন সম্প্রসারণে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতার মাধ্যমে সংরক্ষণের জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বিভিন্ন মিটিং ও সেমিনারে ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি।’

তানভীর হাসান তানু/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।