ভ্যাকসিন নিবন্ধন নিয়ে জটিলতায় ইবি শিক্ষার্থীরা
করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের পঞ্চমবারের মতো রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মু. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি।
এছাড়া সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা আবাসিক হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করতে পারছেন না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের অবহেলারও অভিযোগ তুলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসান শোভন বলেন, ‘এর আগেও কয়েক ধাপে রেজিস্ট্রেশন করেছি। সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের বিজ্ঞপ্তি দেখার পরপরই চেষ্টা করেছি। বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। শুধু রেজিস্ট্রেশন করেই যাচ্ছি। টিকা পাবো কবে?’
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফারহানা ঈশিতা বলেন, ‘আমার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এর আগে প্রথমদিকে নিবন্ধন করতে পারিনি। পরবর্তীতে জন্মসনদ দিয়ে নিবন্ধন করেছিলাম। তবে সুরক্ষা অ্যাপে জন্মসনদের কোনো অপশন নেই। টিকা নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও আবেদন করতে পারছি না।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ আবাসিক না হওয়ায় প্রায় ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করেন। তারা টিকা নেয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সশরীরে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলে শিক্ষার্থীরা একই শ্রেণিকক্ষে বসে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান বলেন, ‘সুরক্ষা অ্যাপে শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। অনাবাসিকরা বঞ্চিত হচ্ছি। ক্লাস শুরু হলে এক রুমেই ক্লাস করব। এমনকি মেসগুলোতেও হলের চেয়েও বাজে অবস্থা। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাহলে কেন শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে? আবাসিকদের পাশাপাশি অনাবাসিকদেরও দ্রুত টিকার আওতায় আনা সুব্যবস্থা করা হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মু. আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা মৌখিকভাবে ইউজিসিতে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে দু-একদিন পর থেকে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে তারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিল না।’
উল্লেখ্য, ২ মার্চ ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আবাসিক শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে তালিকা চেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ১৪ মার্চ আবাসিক ও অনাবাসিক সবার তালিকা চেয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে রেজিস্ট্রেশন কম সম্পন্ন হওয়ায় তৃতীয়বার ২৫ মে পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়।
সর্বশেষ চতুর্থবারের মতো ৩০ মে পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চার বার সময়সীমা বৃদ্ধি করার পরও টিকা নিতে ৫৭ ভাগ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার ৩৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছে ৬ হাজার ৬০৭ জন শিক্ষার্থী। তাই এবার সময় বেঁধে না দিয়ে আবারও রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
রায়হান মাহবুব/এসজে/এমকেএইচ