জাবি শিক্ষক জনির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জাবি
প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২২

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক ২০১২ সালে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

সম্প্রতি মাহমুদুর রহমান জনির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম ব্যাচের ছাত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা আনিকা বুশরা বৈচির সঙ্গে অফিসকক্ষে তোলা একটি সেলফি ফাঁস হলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দেওয়ালে সাঁটানো হয়।

এদিকে গত ২১ নভেম্বর সেলফিটি পোস্টারিং হওয়ার পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা জায়গা থেকে অভিযোগ উঠে আসছে। জনির সঙ্গে ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রীর ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপন এবং ‘অশালীন’ চ্যাটিংয়ের ছবি ও তথ্য জাগো নিউজের কাছে এসেছে। ভুক্তভোগীরা নারী শিক্ষার্থী হওয়ায় জনির বিষয়ে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজিব কুমার সাহা বলেন, জনির সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করায় আমি জানি। সে ছাত্রনেতা ও শিক্ষক থাকা অবস্থায় একাধিক ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পাশাপাশি নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিল জনি। তিনি আমার বান্ধবীকে শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যোগ্যতা স্বত্বেও আমার বান্ধবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও একটি পদ খালি ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের এক সাবেক ছাত্রী বলেন, শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দেন জনি। আমি তার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। পরে আমার যোগ্যতা ও পদ খালি স্বত্বেও আমাকে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়নি। উপরন্তু যাকে নেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে জনির অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস হয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও যোগ্য প্রার্থী ছিল।

এছাড়া ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মাজেদ সীমান্ত একটি ফেসবুক পোস্টে জানান, জনি সভাপতি হওয়ার পর শুরু হয় তার নোংরা রাজনীতি। ইয়াবা আর ফেনসিডিল নিয়মিত খাইতেন তিনি। অথচ তাকে দেখলে মনে হয় ভাজা মাছও খাইতে পারেন না। তার রাজনীতি আমরা সচক্ষে দেখতাম কিন্তু জুনিয়র থাকায় কিছুই বলতে পারতাম না। তার ব্যাচের এক দিদি (যিনি এখন শিক্ষক) তাকে নিয়ে প্রাইভেট কারে ঘুরতে যেতেন। আমাদের সামনেও অশ্লীলভাবে বসে থাকতেন। ওই দিদি চলে গেলে ৪২ আর ৪৪ ব্যাচের কিছু মেয়েকে রাজনৈতিক প্রলোভন দেখিয়ে সব সময়ই কাছে কাছে রাখতেন। দুজনকে আমি প্রায়ই তার সঙ্গে প্রাইভেট কারে দেখতাম।

২০১২ সালের জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেল বলেন, জনির এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা ছাত্রলীগের জন্য বিব্রতকর। এটা নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। এগুলো সত্য প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, জনিকে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন নিপীড়নের অভিযোগ করতে সাহস পাবেন। শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তিনি প্রতিনিয়তই কলুষিত করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। প্রশাসনের দায়িত্বে থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, জনি পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬ ব্যাচের ছাত্র। সে সময় নন্দিতা সরকার নামের তার এক সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। বর্তমানে ওই সহপাঠী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ওই সহপাঠী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তারা উভয়েই গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নন্দিতা সরকার তাদের বৈবাহিক সম্পর্কটি পারিবারিকভাবে স্বীকৃতি পেতে চাপ দিলে জনির মাথা বিগড়ে যায়। তারা বিগত ১৪ বছর ধরে এ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে নন্দিতা সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

এ ব্যাপারে সহকারী অধ্যাপক নন্দিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, বিয়ের বিষয়টি আমার একান্তই ব্যক্তিগত। সেটি পাবলিক করতে চাচ্ছি না।

একই প্রশ্নে জনি বলেন, নন্দিতার সঙ্গে সাড়ে ১৪ বছরের সম্পর্ক। তবে তার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি ব্যক্তিগত হওয়ায় সেটি বলতে চাচ্ছি না।

একাধিক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘অশালীন’ চ্যাটিং এবং ‘অনৈতিক’ সম্পর্কের বিষয়ে মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, আমাকে হেয় করার জন্য একটি মহল এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন। আর শিক্ষক নিয়োগে আমার কোনো প্রভাব নেই। নিয়োগ বোর্ড যাকে যোগ্য মনে করছে তাকেই নিয়োগ দিচ্ছে।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা যেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি তা অস্বস্তিকর। একজন শিক্ষক হিসেবে এগুলো মেনে নেওয়া কঠিন। এসব সত্য হলে বিষয়টি নিন্দনীয়, একজন শিক্ষক এসব কাজ করতে পারেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের একজন সাবেক শিক্ষকনেতা বলেন, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধির ‘নৈতিক অসচ্চরিত্রতা’ ও ‘অসদাচরণ’ সংঘটিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা এ ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, জনি সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আসছে সেটা কোনোভাবে ভালো না। তাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছি। অভিযোগগুলো তদন্ত হবে কী না- এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো আলাপ তুলিনি, তুলবো বলে ভাবছি।

মাহবুব সরদার/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।