রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পেরেকে ক্ষত-বিক্ষত ‘পরিবেশ বন্ধু’

মনির হোসেন মাহিন মনির হোসেন মাহিন , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি
প্রকাশিত: ০৭:৫৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২২

পরিবেশের বন্ধু গাছ। কিন্তু পেরেক মেরে সেই বন্ধুর বুক ক্ষত-বিক্ষত করার যেন হিড়িক পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে। গাছে পেরেক ঠুঁকে সাইনবোর্ড-বিজ্ঞাপন টানানো হচ্ছে একের পর এক।

পরিবেশবিদদের মতে, পেরেকের আঘাতে গাছের ছিদ্র হয়ে পানি, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব ঢুকে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।

গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড-বিজ্ঞাপন লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

পেরেকে ক্ষত-বিক্ষত ‘পরিবেশ বন্ধু’

সরেজমিন দেখে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, কাজলা গেট, প্যারিস রোড, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, হলগুলোর সামনে, বিনোদপুর ও রেলস্টেশনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে ঝুলানো হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য সাইনবোর্ড-ব্যানার, ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন। তাতে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর প্রচারণাও। গাছগুলোর চিত্র দেখে মনে হবে যেন একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ড।

গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। কিন্তু সেই আইন যেন শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। এর প্রয়োগ নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া সোহাগ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছে পেরেক ঠুকলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এতে তাদের ক্ষতি হয়। এভাবে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গাছ ব্যবহার বন্ধের জন্য দেশে আইন আছে। কোনোভাবেই গাছে পেরেক ঠোকা যাবে না।’

পেরেকে ক্ষত-বিক্ষত ‘পরিবেশ বন্ধু’

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্র সংগঠনের যে ব্যানারগুলো পেরেক ঠুকে গাছে লাগানো হয়েছে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পুরো পরিবেশের ওপর পড়ছে। সচেতন শিক্ষার্থী হয়ে যদি আমরা এমন কর্মকাণ্ড করি তাহলে অন্যদের আমরা কী শেখাবো?’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যকার মলয় কুমার ভৌমিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাছে পেরেক মারা কেবল আইনের ব্যত্যয় নয়, এটা গাছকে ধ্বংস করার একটি চেষ্টা। গাছে পেরেক ঠোকার ফলে ওই গাছের আয়ু কমে যায়। ফলে গাছটি দ্রুত সময়ে মারা যায়। তবে চিন্তার বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় গাছ নিধনের এমন প্রকাশ্য চেষ্টা চলছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গাছে পেরেক ঠোকা হলে গাছ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একপর্যায়ে গাছগুলোকে মারা যেতেও দেখা যায়।

পেরেকে ক্ষত-বিক্ষত ‘পরিবেশ বন্ধু’

তিনি বলেন, গাছকে হত্যা করা মানে পরিবেশকে হত্যা করার সামিল। পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সবার উচিত ধ্বংস না করে গাছ লাগানো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী জেলার সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল জাগো নিউজকে বলেন, গাছের জীবনকে নষ্ট করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এখানে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর জাগো নিউজকে বলেন, গাছে পেরেক ঠুকে পোস্টার-ব্যানার টাঙানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার একটি আইন পাস করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের সব গাছ থেকে পোস্টার-ব্যানার নামানোর জন্য আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। আবারও অভিযান চালাবো।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, ক্যাম্পাসে পেরেক ঠুকে যেসব ব্যানার লাগানো হয়েছে তা সরিয়ে ফেলতে আমরা কাজ করছি।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।