ধর্ষণকাণ্ড

জাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কৌশলে এক দম্পতিকে ডেকে নিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ পাঁচ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের’ ব্যানারে এ অবরোধ করা হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে এই অবরোধ তুলে নেন তারা। এ সময় প্রশাসনিক ভবনে কর্মকর্তাদের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এর আগে গতকাল সোমবার একই দাবিতে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখেন শিক্ষক-শিক্ষার্থরা।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- সব হল থেকে বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করে নিয়মিত ছাত্রদের আবাসন নিশ্চিত করা, যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা, ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু-তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া, মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

অবরোধে অংশ নিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, সন্ত্রাস ও মাদক কারবারের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। অছাত্রদের বের করে দেওয়ার জন্য সিন্ডকেটে নেওয়া সিদ্ধান্তের পাঁচ কর্মদিবস পার হয়ে গেলেও আমরা কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখিনি। অছাত্রদের বের না করে বরং প্রশাসন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে। নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিশ্চিতসহ তাকে সহায়তাকারী প্রক্টরের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনে যাবো। প্রশাসন এর দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মাদকমুক্ত করতে হবে। যারা অছাত্র রয়েছেন, তাদের সরিয়ে দিতে হবে। প্রশাসন আমাদের বলেছিল, পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অছাত্রদের বের করে দেবে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঢাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এখানে হল প্রশাসন যদি কাজ করে, তাহলে কিন্তু সমাধান হয়। কিন্তু তারা কেউ কাজ করছেন না।

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে যে ঘটনাগুলো কলুষিত করেছে, কলঙ্কিত করেছে, সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে, সে সম্মান উদ্ধারে উপাচার্যের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। র্যাবের ব্রিফিং থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন যে পাশবিক ঘটনাগুলো ঘটছিল, তা এই অছাত্ররা করছিল। প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে, তারা এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, আমরা যে পাঁচটি দাবিতে মাঠে নেমেছি, কোনো শিক্ষার্থী কি বলতে পারবে যে আমরা কোনো ভুল কথা বলেছি। তারপরও আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমরা দাবি জানিয়েছি মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করতে। এমন আর একটি বিশ্ববিদ্যালয় দেখান যেখানে ২৫শ মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী হলে আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এবং তার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়নি। নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর জনি এতো শক্তি কোথায় পান? তিনি শক্তি পান উপাচার্যের কাছে, প্রক্টরের কাছে, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কাছে। নয়তো এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো না।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা, গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম,পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ।

মাহবুব সরদার/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।