শখের বশে শোপিস তৈরি, মাসে আয় লাখ টাকা

আমিরুল হক আমিরুল হক , জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৬:০৯ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২৫
জিপসন ও কংক্রিট দিয়ে বাহারি শোপিস তৈরি করেন তানিসা তানভি ঐশি/ছবি-জাগো নিউজ

অনেকেই পছন্দের ঘরটিকে মনের মতো করে সাজাতে চান। এজন্য প্লাস্টিক, স্টিল, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্যের বিকল্প নেই। তবে ঘর সাজনোর জন্য কাগজের পণ্যও বেছে নেন অনেকে। কিন্তু জিপসন ও কংক্রিট দিয়ে নানা রকম ‘শোপিস’ তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ গয়াবাড়ি এলাকার তানিসা তানভি ঐশি। শখের বশে কাজটি শুরু করে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা।

মোখলেছুর রহমান ও দিলরুবা ইসলাম দম্পতির মেয়ে ঐশি। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা তিস্তা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। মা দক্ষিণ গয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

শখের বশে শোপিস তৈরি, মাসে আয় লাখ টাকা

আলাপচারিতায় জানা যায়, ঐশি ছোটবেলা থেকে শখের বশে আর্ট করতেন। এছাড়া বাগান করা, ঘর সাজানো, নিজের খেলনা দিয়ে বিভিন্ন রকম আকৃতি তৈরি করা ছিল তার নেশা। একপর্যায়ে গ্রামে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বড় বোনের সঙ্গে চলে যান ঢাকায়। সেখানে ভর্তি হন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০২৩ সালে সেখানে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। পরে ফিরে আসেন আবার গ্রামে। এখানে এসে ভর্তি হন তিস্তা ডিগ্রি কলেজে।

বর্তমানে পড়ছেন দ্বাদশ শ্রেণিতে। ঢাকায় স্কুলবন্ধুদের ছেড়ে এসে এখানে লম্বা সময় একাকিত্বে দিন পার করেন। সে সময়গুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখেন ঐশি। একসময় পাকিস্তানি ক্রাপ্টের একটি ফেসবুক পেজ দেখে জিপসন ও কংক্রিট দিয়ে ঘর সাজানোর বাহারি পণ্যে তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ হন। যেই ভাবা সেই কাজ। বাবার সাহায্যে কাঁচামাল নিয়ে এসে তৈরি করা শুরু করেন নানা পণ্য। কিন্তু প্রথম দিকে যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।

‘প্রথম অর্ডারে মাত্র ৩০০ টাকা আয়। এরপর আর পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি। এখন তার মাসিক আয় প্রায় লাখ টাকা। শখের কাজ হয়ে গেছে তার পেশা। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন বাবা-মা, ভাইবোন। রয়েছে দুজন কর্মচারী। সামনে আর ১০ জন কর্মচারি নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ঐশির।’

অনেক টাকার কাঁচামাল নষ্ঠ করেন। কিন্তু ঐশি কিছুতেই হাল ছাড়েননি। একপর্যায়ে একে একে তৈরি করেন নানান পণ্য। তৈরি করা এসব পণ্য উপহার হিসেবে দেন স্বজন ও বন্ধুদের। তারা পেয়ে খুব প্রশংসা করেন। বন্ধুর পরামর্শে সেগুলোর ছবি ফেসবুকে আপলোড করেন। তা পছন্দ করে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন কয়েকজন। তিনিও না করেননি।

শখের বশে শোপিস তৈরি, মাসে আয় লাখ টাকা

প্রথম অর্ডারে মাত্র ৩০০ টাকা আয়। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি। এখন তার মাসিক আয় প্রায় লাখ টাকা। শখের কাজ হয়ে গেছে তার পেশা। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন বাবা-মা, ভাইবোন। রয়েছে দুজন কর্মচারী। সামনে আর ১০ জন কর্মচারি নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ঐশির।

অনলাইনে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণও দেন ঐশি। তার স্বপ্ন ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে হবে তার হাতের তৈরি করা পণ্যের ‘শো রুম’। কাজের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘোচাবেন অনেক মানুষের।

শখের বশে শোপিস তৈরি, মাসে আয় লাখ টাকা

ঐশি জানান, আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে তিনি এ কাজ করছেন। আজকের এ সফলতার জন্য তার বাবা-মায়ের ভূমিকা বেশি বলে মনে করেন তিনি। এখন তার প্রায় শতভাগ পণ্য ‘ইপ্পা’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে।

‘অনলাইনে আমার শখের জিনিসটা মানুষের কাছে পৌঁছে যাক, এটাই মূল উদ্দেশ্য। ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জনে বিন্দুমাত্র ছাড় দেই না। প্রত্যেক কাস্টমার আমার কাছে অনেক মূল্যবান। লাভের চেয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা বেশি ভাবি।’

তিনি বলেন, ‌‘অনলাইনে আমার শখের জিনিসটা মানুষের কাছে পৌঁছে যাক, এটাই মূল উদ্দেশ্য। ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জনে বিন্দুমাত্র ছাড় দেই না। প্রত্যেক কাস্টমার আমার কাছে অনেক মূল্যবান। লাভের চেয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা বেশি ভাবি।’

শখের বশে শোপিস তৈরি, মাসে আয় লাখ টাকা

ঐশির বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ঐশির মধ্যে নতুনত্ব কিছু করা প্রবল ইচ্ছে কাজ করছিল। কিন্তু সে এত কম বয়সে সফল হবে, এটা কখনো ভাবিনি।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নীলফামারীর উপব্যবস্থাপক নূরেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঐশির হাতের তৈরি ঘর সাজানোর নানা পণ্য তাদের নজরে এসেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে ঐশির জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বিসিকে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মেলায় স্বল্প মূল্যে স্টল বরাদ্দ ও পরোক্ষভাবে সব উদ্যোক্তার পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করি। ঐশী যদি মনে করেন আমাদের সহযোগিতা নিতে পারেন।’

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।