ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আন্দোলন-অবরোধ স্থগিত
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদী পাশের ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দার সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন-অবরোধ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লার সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান প্রস্তাব দেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর একাধিক মামলা ঝুলছে। কাকে কোন মামলায় ঢুকিয়ে দেয় এ নিয়ে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। এছাড়া ভাঙচুরের আগেই (১৪ সেপ্টেম্বর) দ্রুত বিচার মামলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতার করা হয় আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিঞাকে। তাকে এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি। আন্দোলনকারীরা উপজেলায় গেলে তাদের গ্রেফতার করা হবে না এ মর্মে তারা শঙ্কার কথা ইউএনওকে জানান। এর প্রেক্ষিতে ইউএনও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হবে না বলে নিশ্চয়তা দেন। পরে ২০ জনের মতো আন্দোলনকারী সন্ধ্যার পর ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনার একপর্যায়ে যোগ দেন ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, ইউএনও আমাদের জানিয়েছেন, এ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। হাইকোর্ট ১০ দিনের সময় দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে রুল জারি করেছেন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর এ রুলের জবাব দেওয়ার কথা। ইউএনও তাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত চলে গেছে এ অবস্থায় আদালতের রায় পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান।
এসময় আন্দোলনকারীরা মামলার বিষয় তুলে ধরে ইউএনওর কাছে নিরীহ কাউকে হয়রানি না করার নিশ্চয়তা এবং অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তারা বলেন, যারা ভাঙচুর ও সহিংসতায় অংশ নিয়েছে ভিডিও ফুটেজ ধরে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ইউএনও তাদের প্রস্তাবে সম্মত হন এবং এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দেখা করানোর প্রস্তাব দিলে আন্দোলনকারীরা সম্মত হন।
এর প্রেক্ষিতে শতাধিক আন্দোলনকারী রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লার সঙ্গে আলোচনা করেন। দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ আলোচনা চলে। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি)মো. আব্দুল জলিল ও এক সেনা কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক হামিরদী ইউনিয়নের মাঝিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা রবীন সোহেল জানান, জেলা প্রশাসক(ডিসি) আমাদের বলেছেন আপনাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দেইনি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী ঢুকে সহিংসতা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তবে এ সহিংসতায় যারা জড়িত নন তাদের কোনো হয়রানি করা হবে না। বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। রায় আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশা করছি। রায় না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আন্দোলন স্থগিত করুন এবং নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করুন। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কথার প্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত চলমান কর্মসূচি আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, ওই এলাকার জনগণের পালস ধরতে পেরে আমরা সেভাবেই নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছি। আন্দোলনকারীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে। তবে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) যারা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, ভাঙ্গা থানা ও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট এ রুলে জবাব দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় বেঁধে দেন।
এন কে বি নয়ন/এমএন/জেআইএম