মাদককে ‘না’ বলার মূল্য জীবন দিয়ে দিতে হলো রামেলকে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের তরুণ রামেল ছিলেন সোজাসাপ্টা, সাহসী এক মানুষ। মাদকসেবীদের অপকর্ম সহ্য করতে পারতেন না। সেই সাহসই শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিলো তার প্রাণ।

কয়েকদিন আগে হোসেনপুর উপজেলা তেতুলিয়া গ্রামের মো. নাঈম নামের এক মাদকসেবীকে মাদক সেবনে বাধা দেন পাশের জিনারী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রামেল (২৫)। কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হয় বিরোধ। কয়েকদিন পরই সেই তর্কের ভয়াবহ পরিণতি। ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে ক্রিকেট খেলে ফেরার পথে নাঈমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বেলথৈল মাঠের কাছে রামেলের ওপর হামলা চালায়। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করে রামেলকে।

তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পাশ্ববর্তী গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রামেলের অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার তাকে রেফারড করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে রামেলের মৃত্যু হয়। রামেলের মৃত্যু শুধু একটি প্রাণহানি নয়, পুরো এলাকার বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন
জুলাই শহীদদের স্মরণে সাতক্ষীরায় আলোচনা সভা 
হত্যাচেষ্টার পরও খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াই করে গেছেন 
ময়মনসিংহে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যা 

এ ঘটনায় শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে জিনারী গ্রামে রামেলের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে ফেটে পড়ে গ্রামবাসী। নিহতের বাবা-মা, স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক থেকে শুরু করে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একত্রিত হন। সবার কণ্ঠে একটাই দাবি, খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

নিহতের বাবা বাদী হয়ে তেতুলিয়া গ্রামের নাঈমসহ সাতজনকে আসামি করে ৩ অক্টোবর হোসেনপুর থানায় মামলা করেছেন। কিন্তু এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদক এখন আমাদের গ্রাম পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। রামেল সেটা ঠেকাতে গিয়েই খুন হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে কেউ আর মাদকবিরোধী কথা বলার সাহস করবে না। রামেল ছিল তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে তার পরিবার আজ দিসে হারা।

নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করত বলেই ওকে মেরে ফেলেছে। আমি কোনো রাজনীতি চাই না, শুধু আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। যেন আর কোনো বাবাকে এমনভাবে ছেলেকে হারাতে না হয়।

জিনারী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. মনসুর আহমেদ বলেন, রামেল ছিল শান্ত ও পরিশ্রমী একটা ছেলে। এলাকায় মাদকবিরোধী প্রচারে সবসময় এগিয়ে থাকত। তাকে হত্যা করা মানে একজন ভালো তরুণকে হারানো। আমরা চাই, যারা এটা করেছে তারা যেন দ্রুত ধরা পড়ে। না হলে মানুষ আইনের ওপর বিশ্বাস হারাবে।

হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন জানান, ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এসকে রাসেল/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।