সাগরেই কাটবে বেশি সময়, তড়িঘড়ি করে দেখতে হবে সেন্টমার্টিন

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
সেন্টমার্টিন/ফাইল ছবি

প্রথম মাসে রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকছে না
দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে
নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ছাড়বে জাহাজ
সাগর পার হতেই কেটে যাবে বেশি সময়

দ্বীপবাসীর হতাশার মাঝেই অবশেষে ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সেন্টমার্টিন। তবে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যাত্রার প্রথম মাস কোনো পর্যটক দ্বীপে রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন না। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে। ফলে সময়মতো কক্সবাজার ফিরতে নির্ধারিত সময়ে দ্বীপ ত্যাগ করতে হবে। এতে পর্যটকরা দ্বীপে নেমে কোথাও ঘোরার সুযোগ পাবেন খুবই কম।

শুধু তাই নয়, গত বছরের মতো কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটক বোঝাই করে সেন্টমার্টিন যাবে জাহাজ। আইনিভাবে নিষেধ থাকায় উখিয়ার ইনানী থেকে জাহাজ ছাড়ার সুযোগ নেই। ফলে, অতীতের মতো সাগরে কয়েক ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করতে হবে পর্যটকদের।

ভ্রমণকালে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষায় প্রযোজ্য ১২টি নির্দেশনা উল্লেখ করে ২২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ চলবে—এটা আশা করেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আইনগত বিধিনিষেধের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এখান থেকে জাহাজ ছাড়লে দ্বীপে জাহাজ পৌঁছাতে সময় কম লাগতো। ইনানী পার হয়ে কক্সবাজার জাহাজ পৌঁছাতে মিনিমাম ঘণ্টাতিনেক সময় বেশি লাগবে। আসার সময়ও একই অবস্থা হবে। এতে ফিরতি জাহাজ ঘাটে পৌঁছাতে রাত ৯টাও বাজতে পারে।’

সেন্টমার্টিনে যাতায়াত নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি দিয়ে সোমবার (২৭ অক্টোবর) একটি চিঠি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন সই করা ওই চিঠিতে পাঁচটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছে। ইসিএ এলাকায় কক্সবাজার পৌরসভা (রাজস্ব বিভাগের রেকর্ড করা সমুদ্র সৈকত বা বালুচর বা খাড়ি বা বন বা জলাভূমি) এবং ইনানী মৌজা ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০)-এর ৫ (৪) ধারা অনুযায়ী, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন বলে ঘোষণা করা এলাকায় কোনো ক্ষতিকর ‘কর্ম বা প্রক্রিয়া’ চালু রাখা বা শুরু করা যাবে না।

চিঠির বিষয় নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগের নিয়মেই কক্সবাজারের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। বিষয়টি অংশীজনদের জানানো হয়েছে।’

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। আবার প্রথম একমাস রাত্রিযাপনের সুযোগ নেই। ফিরতে লাগবে ছয় ঘণ্টা। এতে করে সেন্টমার্টিন দেখার খুব কম সময় পাবেন পর্যটকরা।’

আরও পড়ুন:
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে মানতে হবে ১২ নির্দেশনা
সেন্টমার্টিনে পর্যটক থাকতে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞায় বছরজুড়ে অনিশ্চয়তা
সেন্টমার্টিনে পর্যটন কখনোই বন্ধ করা হয়নি: পরিবেশ উপদেষ্টা
সেন্টমার্টিনে এখনো গত মৌসুমের হতাশার ছাপ
বড়শিতে ধরা পড়লো ৪৫ কেজি ওজনের দুই গোয়া মাইট্যা

রাত্রিযাপনসহ বিধিনিষেধের ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের আজকের দিনেও সেন্টমাটিনের পর্যটন শিল্প রক্ষা ও লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বাঁচানোর জন্য ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে ছিলাম। জানি না হয়তো আবারও রাজপথে নামতে হতে পারে। সরকারের সদয় দৃষ্টি আহ্বান করছি।’

এদিকে মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন মতে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে পর্যটকদের অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল এবং প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।

নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়া বনে প্রবেশ, কেওড়া ফল সংগ্রহ বা বেচাকেনা, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজ কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল ও সি-বাইকসহ যে কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না। এছাড়া একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক-যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনি প্যাক, ৫০০ মিলিলিটার ও এক লিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এক দশক ধরে দ্বীপবাসী পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে সংসার চালাচ্ছেন। গতবছর থেকে সীমিত পর্যটক যাতায়াতে বাধ্যবাধকতায় দ্বীপবাসী আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এরপর চলতি মৌসুমের প্রথম যাওয়া পর্যটকদের সেবা দিতে মুখিয়ে আছেন পর্যটনসেবীরা। এখন পর্যটক রাত্রিযাপনের সুযোগ নেই। তাই আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মনে প্রশান্তি নেই। যে পরিমাণ পর্যটক যাবেন তা গড় হিসেবে সব প্রতিষ্ঠান সেবার জন্য পাবেনও না।

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।