ইলিয়াস-আরিফের ঘরে নেই ঈদ আনন্দ
ঈদের খুশিটা পূর্ণ হয় আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সকল সদস্য এক সাথে হলে। নামাজে যাবার আগে পরিবারের ছোটরা বড়দের সালাম করবে। সালামি পাবে। মা-বাবার দোয়া নিবে সন্তানরা। এসবই তো ঈদের আনন্দের বড় উপলক্ষ। কিন্তু যার পরিবার সেই আনন্দময় মানুষগুলো থেকে দূরে রয়েছে কেমন হবে সেই সব পরিবারের ঈদ !
দীর্ঘ ৪০ মাস ধরে নিখোঁজ আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী। আর সাত মাস ধরে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে আছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) আরিফুল হক চৌধুরী। তাই সঙ্গত কারণেই এই দুই পারিবারে এখন ঈদের আনন্দ নেই।
নিখোঁজ ইলিয়াস :
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার পরিবার শুধু নিয়ম রক্ষার খাতিরেই ইলিয়াসের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে ঈদ উদযাপন করতে যায়। এমনটি জানিয়েছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদীর লুনা।
জাগো নিউজকে লুনা জানান, ঈদকে ঘিরে তাদের মনে এখন আর কোনো আনন্দ-অনুভূতি নেই। ইলিয়াস আলীকে ঘিরেই তাদের ঈদের সব আনন্দ, যা এখন কেবলই স্মৃতি। ইলিয়াস আলীর পথ চেয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা এ নিয়ে ছয়টি ঈদ কাটিয়েছেন। কিন্তু অসহনীয় এ প্রতীক্ষার অবসান কবে হবে তা জানে না ইলিয়াসের পরিবার।
ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবির প্রহর কাটে ছেলের প্রতীক্ষায়। রোজই তার মনে হতে তাকে। এই বুঝি দরোজায় কড়া নাড়ল। এই বুঝি ছেলে তার ফিরে এল। কিন্তু একে একে কয়েক বছর কেটে গেলেও অপেক্ষার প্রহর আর ফুরাল না তার। সূর্যবান বিবির ঘরে আনন্দ এলো না ঈদের।
ইলিয়াস আলীর তিন সন্তান। বড় ছেলে আবরা, ছোট ছেলে লাবিব এবং একমাত্র মেয়ে সাইয়ারা নাওয়ালও তারা বাবার প্রতীক্ষায় থাকে। বাবা তাদের সব ঈদে জামা কিনে দিতেন। ঈদের আনন্দের উপলক্ষ ছিলেন বাবা ইয়িলয়াস আলী। এখন এসব কেবলই দুঃসহ স্মৃতি! ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বানানী থেকে গাড়ি চালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস মেলেনি।
কারাগারে আরিফ :
গত রোজার ঈদেও তিনি ছিলেন। শাহী ঈদগাহে ঈদের জামায়াতে আসার আগে মা আমেনার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এবার এসব কেবলই স্মৃতি। দোয়া নিতে মায়ের কাছে আসতে পারবেন না বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) আরিফুল হক চৌধুরী।
অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় তিনি এখন কারাগারে। তাই এবার তিনি বাড়িতে ঈদ করতে পারবেন না। ঈদের আগে সালাম করা হবে না মা আমিনা খাতুনকে। ঈদের পর রীতি অনুযায়ী সিলেট শাহী ঈদগাহেও দেখা যাবে না এ নগরপিতাকে।
অভিভাবকহীন নগরের মত অবস্থা আরিফুল হক চৌধুরীর পরিবারেও। আরিফ চৌধুরীর পরিবারে তার মা ছাড়াও আছেন স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী। আছেন তার তিন সন্তান। এর মধ্যে বড় ছেলে ও মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। সিলেট নগরের কুমারপাড়ের বাসায় আছেন কেবল তার মা, স্ত্রী ও ছোট মেয়ে লাইফা।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া গ্রেনেডে গুরুতর আহত হন শাহ এএমএস কিবরিয়া। পরে ঢাকা নেয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবদুল মজিদ খান এমপি বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা এবং একটি বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন।
প্রথম দুই দফায় চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেন কিবরিয়া পরিবারসহ বাদী। পরে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারকের নির্দেশে তৃতীয় দফায় তদন্তভার পান সিআইডির সিলেট জোনের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন্নেছা পারুল। তিনি তদন্ত শেষে খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন।
চার্জশিট প্রদানের পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে ২০১৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসম্পর্ণ করেন আরিফ। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তাকে এই জন্যে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি কর্পোরেশন বিভাগ। এরপর এই মামলায় কয়েক দফা জামিন চাইলেও আদালত আরিফের জামিন নাঞ্জুর করেন। তিনি বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে তাঁর স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী জানিয়েছেন।
ছামির মাহমুদ/এসএস/পিআর