করোনা-বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ফেরিঘাটে যাত্রীদের ভিড়
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে চলছে সাধারণ ছুটি। এ ছুটিতে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার বিস্তার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জেলায় পুরোপুরি এবং ১৭ জেলায় আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু ফেরিঘাটে নেই এর কোনো চিহ্ন। ফেরিঘাটে মানুষের চলাচল দেখে মনে হচ্ছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
কয়েক দিন ধরেই কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে মানুষের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। এখানে নেই কোনো বাধা। করোনা নিয়ে এসব মানুষের মাঝে কোনো উদ্বেগও দেখা যায়নি। মানুষ ছুটছে তো ছুটছেই। মূলত জীবিকার তাড়নায় রাজধানী ঢাকায় যাওয়ার জন্য পদ্মা পার হতে ফেরিঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বৈরী আবহাওয়া থাকলেও তা উপেক্ষা করেই চলাচল করছে মানুষ। যেখানে প্রাণঘাতী করোনার ভয় নেই, মানুষের মাঝে সেখানে বৈরী আবহাওয়া তো তুচ্ছ বিষয়।
শুক্রবার (১ মে) সকাল থেকেই ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড় রয়েছে শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে। ফেরির সংখ্যা খুব কম হলেও ঠাসাঠাসি করেই সেখানে ভিড় করছেন যাত্রীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে কার্যত লকডাউন দেশের বিভিন্ন এলাকা। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফেরেনি রাজধানী ঢাকায়ও। চলছে না দূরপাল্লার কোনো পরিবহনও। তবে এরই মধ্যে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা খোলা হয়েছে এমন খবরে চাকরি বাঁচাতে ছুটতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে তাদের বড় একটা অংশই ঢাকার উদ্দেশে গত কয়েকদিন ধরেই যাচ্ছেন। শুক্রবারও তাদের যাত্রা থেমে নেই। পথে পথে ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে পৌঁছান তারা। এখানে ফেরিতে করে পদ্মা পার হতে হচ্ছেন এই যাত্রীরা।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় বৈরী আবহাওয়া। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বৃষ্টি আর বাতাস বইতে থাকে। এই আবহাওয়ার মধ্যেই দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে পদ্মা পার হচ্ছে শত শত যাত্রী।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে ৭টি ফেরি চলছে। এর মধ্যে ২টি রোরো, ২টি ডাম্প, ২টি মিডিয়াম ও ১টি ছোট। পরিবহনের সংখ্যা ঘাট এলাকায় কম। তবে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। পরিবহনের জন্য ১ ঘণ্টার মতো ঘাটে দেরি করে সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে ফেরিগুলো ঘাট ছাড়ছে।
আলাপ হয় এক যাত্রীর সঙ্গে। একদিকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি, অন্যদিকে ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেন যাচ্ছেন ঢাকায়- জবাবে তিনি বলেন, ‘পেটের ক্ষুধার জন্য যাচ্ছি। বাড়িতে এই ক’দিন তো ছিলাম। কাজ না করলে খাবার আসবে কোত্থেকে? করোনার চেয়েও পেটের ক্ষুধা বড়! কাজে যেতে না পারলে হয়তো চাকরিও থাকবে না।’
টেকেরহাট থেকে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘ত্রাণের চালে কয়দিন চলে? ইনকাম বন্ধ। অথচ খাওনের মুখ তো বন্ধ হয় না। এইভাবে আর কয়দিন চলা যায়?’
ঘাট সূত্র জানায়, সকাল থেকেই ঢাকাগামী যাত্রীরা ঘাটে আসছেন। সকালের দিকে ট্রলারেও পার হয়েছে যাত্রীরা। ঝড়বৃষ্টি থাকায় ফেরিতে সব যাত্রী পার হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম বলেন, ‘ফেরিতে পরিবহন কম। তবে সাধারণ যাত্রী অনেক। ফেরি লোড হতে এক/দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সকাল থেকে সাধারণ যাত্রীরাই পার হচ্ছেন ফেরিতে।’
এ কে এম নাসিরুল হক/এফআর/পিআর