খায়রুলের বাড়িতে এখন অনেক খাবার
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনার এক কোণে ছোট্ট একটি দোকান ছিল দৃষ্টিহীন খায়রুল ইসলামের। ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরাই ছিল গ্রাহক।
দোকানে পণ্য বলতে ছিল স্বল্প মূল্যের খাতা, কলম ও চকলেট। আর এগুলো বিক্রি করেই চলে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ খায়রুলের সংসার। বিদ্যালয় আঙিনায় ক্ষুদ্র দোকান পরিচালনা করে তার দিনে ১শ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। করোনা শুরুর প্রথম থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় খায়রুলের একমাত্র উপার্জনের পথ বিদ্যালয়ের পাশের দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়।এমন ক্রান্তিকালে এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম খাবার দাবারও।ঘরে যে খাবার ছিল তা ইতোমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। খোঁজও নিচ্ছে না কেউ।চোখের অন্ধকারের সাথে তার ভেতরেও এখন অন্ধকার হয়ে আসছে। জাগছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে না খেয়ে মৃত্যুর ভয়।
খায়রুলের এমন অসহায়ত্ব নিয়ে ১৯ মে মঙ্গলবার অনলাইন নিউজপোর্টার জাগোনিউজ২৪.কম-এ করোনায় দৃষ্টিহীন খায়রুলের খোঁজ নেয় না কেউ সংবাদ প্রকাশের পর সমাজের হৃদয়বান মানবিক ব্যক্তিরা খায়রুলের খোঁজ নিয়ে খাদ্য সহায়তাসহ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
করোনার ক্লান্তিলগ্নে খায়রুলের এমন দুর্ভোগের কথা জাগোনিউজে দেখে ৫০ কেজি চাল, ১০ কেজি ডাল, ৫ কেজি পেঁয়াজ, ১০ কেজি আলু, এক কেজি রসুন, সরিষার তেল ও সয়াবিন তেল নিয়ে গত বুধবার দুপুরে খায়রুলের বাড়িতে হাজির হন স্থানীয় ব্যবসায়ী পুষ্পদাম রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ্দাম হোসেন অনন্ত।
ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন অনন্ত বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় সত্যিই বিপাকে পড়েছে দৃষ্টিহীন খায়রুল।দৃষ্টিহীন খায়রুলের আট মাসের এক শিশু সন্তানসহ ১১ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
জাগোনিউজে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে খায়রুলের এমন অসহায়ত্ব নিয়ে একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পেরে খাদ্যসামগ্রী তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।পরবর্তীতে খাদ্য সংকট হলে মুঠোফোনে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
এছাড়াও সংবাদটি দেখে ওই রাতেই গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ নেতা সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম ঈদের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে খায়রুল ইসলামের বাড়িতে হাজির হন।
দৃষ্টিহীন খায়রুল বলেন, দোকান বন্ধ থাকায় অনেকটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন কিছুটা ভালো লাগছে।আমার দিকে কেউ না তাকালে হয়তো ঈদে না খেয়ে থাকতো হতো। ঈদে আমার এ খাদ্যগুলো খুব উপকারে আসবে। তিনি সকলের জন্য দোয়া করেন।
এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম রোমান আলীর পক্ষে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল হাসান জিকু, গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সদস্য মো. নাছির মোড়লও খায়রুলের খোঁজ খবর নিয়েছেন।
গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহিনুর রহমান জানান, দৃষ্টিহীন খায়রুলকে অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা বেছে নিতে বললেও তিনি তা নেননি। খায়রুলের অসহায়ত্ব ও মানবিকতার কথা বিবেচনা করে আমরা বিদ্যালয় আঙিনায় এলাকায় তাকে ক্ষুদ্র দোকান পরিচালনার অনুমতি দিয়েছি। বিদ্যালয়ে আমরা শিশুদের স্বাভাবিক পাঠদানের পাশাপাশি নীতি, নৈতিকতা, সততা ও আদর্শের শিক্ষা দিয়ে থাকি। এ শিক্ষায় আলোকিত হয়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দৃষ্টিহীন খায়রুলের দোকান চালাতে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খায়রুলকে বিভিন্ন জনের দেয়া খাদ্য সহায়তা তার কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।
শিহাব খান/এমএএস/পিআর