তথ্য গোপন করে নিয়মিত রোগী দেখেছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম
করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার তথ্য গোপন রেখে নিয়মিত প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জাহাঙ্গীর আলম। এমনকি তিনি কয়েকটি অপারেশনও করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং হাসপাতালের স্টাফরা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ওই ক্লিনিকে নতুন করে রোগী ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ৬ জুন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ৮-৯ দিন পর থেকেই তিনি তথ্য গোপন করে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেছেন। এছাড়া ২৩ জুন প্রথম ফলোআপ রিপোর্টেও কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। এ সময় বাড়িতে কিংবা হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকার কথা থাকলেও তা না করে প্রাইভেট একটি হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেছেন সরকারি হাসপাতালের এই চিকিৎসক।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরেও তাকে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের ২০২ নম্বর কক্ষে রোগী দেখা অবস্থায় পাওয়া যায়। করোনা পজিটিভ হলেও নিয়মিত এ হাসপাতালে রোগী দেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুন নমুনা পরীক্ষার পর করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জাহাঙ্গীর আলম। গত ২৩ জুন প্রথম ফলোআপ রিপোর্টেও কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার কথা ছিল জাহাঙ্গীর আলমের।কিন্তু তাকে পাওয়া গেছে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে রোগী দেখা অবস্থায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ৬ জুন করোনা শনাক্ত হয় তার। এ কয়দিন বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা সুস্থ হওয়াতে হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে রোগী দেখতে নয় তার স্ত্রীকে নিতে এসেছিলেন বলে দাবি তার। তার স্ত্রীও প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক বলে জানান তিনি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ফলোআপ পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ফলোআপ রিপোর্ট পজিটিভ আসার বিষয়টি আমি কিছুক্ষণ আগে জেনেছি। পজিটিভ এসেছে আবার নেগেটিভও আসবে। আরও একটা ফলোআপ পরীক্ষা তো আছে। আর আমি তো শারীরিকভাবে সুস্থই। আমি আজই কেবল আমার স্ত্রীকে নিতে এসেছিলাম। আমি এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।
এদিকে প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. আহসানুল কবির বলেন, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে হাসপাতালে তিনি একটি ইনজেকশন নিতে এসেছিলেন। এ সময় একজন রোগী আসলে দূর থেকেই তার কাগজপত্র দেখেছেন। ফলোআপ পরীক্ষাও তার পজিটিভ এসেছে এ বিষয়টি তিনি জানতেন না বলে দাবি তার। গত কয়েকদিন যাবতই ডা. জাহাঙ্গীর আলম হাসপাতালে রোগী দেখার বিষয়টি অস্বীকার করেন হাসপাতালের এমডি।
অভিযোগ রয়েছে করোনা পজিটিভ আসার পর তথ্য গোপন করে শহরের আরও একটি স্বনামধন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। দুই-তিনদিন পর ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলে তাকে হাসপাতালে আসতে নিষেধ করেন। তবে প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখছিলেন তিনি। তথ্য গোপন করে হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখার মধ্য দিয়ে রোগী এবং হাসপাতালের স্টাফদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন এ চিকিৎসক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায় বলেন, এটা কখনই কাম্য নয়। আমি বিষয়টি জানতাম না। আমি জানি তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
করোনা পজিটিভ হয়েও চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়টি ‘গর্হিত, অনৈতিক এবং দণ্ডনীয় অপরাধ’ উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, এটা হয়ে থাকলে সত্যিকার অর্থে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রোগীরা মামলাও করতে পারেন। আর ঘটনা জানার পরপরই আমরা উক্ত বেসরকারি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। পাশাপাশি ডা. জাহাঙ্গীর এর মধ্যে যে যে রোগী দেখেছেন বা সংস্পর্শে এসেছেন তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আর উক্ত বেসরকারি হাসপাতালটি লকডাউন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আইনগতভাবে তিনি এটা পারেন না। তাকে আইসোলেশনে থাকতেই হবে। এ বিষয়ে কেউ লিখিত দিলে আমি ব্যবস্থা নেব।
শাহাদাত হোসেন/এমএএস/পিআর