ঝুঁকি নিয়ে চলছে খুলনার ১৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়


প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অস্থায়ী চালা ঘর আর খোলা আকাশের নিচে চলছে খুলনার ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার কারণে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ব্যবহার অনুপযোগী অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। দুর্ঘটনার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাদের অভিভাবকরাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে খুলনা মহানগরীসহ জেলার নয় উপজেলার ১৮৬টি সরকারি ও সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অস্থায়ী চালাঘর ও খোলা আকাশের নিচে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে মহানগরীতে ৬টি, কয়রা উপজেলায় ১৯টি, ডুমুরিয়া উপজেলায় ৩৬টি, তেরখাদা উপজেলায় ১৩টি, দাকোপ উপজেলায় ১৯টি, দিঘলিয়া উপজেলায় ৯টি, পাইকগাছা উপজেলায় ৩৪টি, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৩৮টি ও রূপসা উপজেলায় ১২টি। এ হিসাব অনুযায়ী খুলনায় ১৭.৬৬ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। আর এসব বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রয়েছে অন্তত ৪১ হাজার শিশু শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থী নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে লেখাপড়া করছে। শিক্ষকদের সঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা মঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিবপদ বিশ্বাস জানান, ২০১৩ সালের মে মাসে তার বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর থেকে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসে বার বার চিঠি দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি তারা।

চিংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী ফকির জানান, টাকার অভাবে ঘরের চালা তৈরি করেও ছাউনি দিতে পারিনি। তাই ছাউনিবিহীন ঘরেই ক্লাস নিতে হচ্ছে।

কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মণ্ডল জানান, স্কুল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয় ত্যাগ করে পাশের মন্দিরে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এখানে জায়গা অত্যন্ত কম। ওইসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, রোদ, বৃষ্টি আর খোলা আকাশের নিচে তাদের ক্লাস করতে কষ্ট হয়। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে। ফলে স্কুলে আসতে তাদের ইচ্ছা করে না।

অভিভাবকরা জানান, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে খুব আতঙ্কে  থাকি। প্রায়ই স্কুলে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ছেলে-মেয়েদের গায়ের উপর পড়ে। যে কোনো সময়ই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

বটিয়াঘাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুধা রানী দাস জানান, তার উপজেলায় ৩৮টি স্কুল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব পরিত্যক্ত ভবন ছেড়ে অন্য স্থানে টিন শেড তৈরি করে তাতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। এছাড়া স্কুলের বারান্দাতেও ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

রূপসা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, ঐ উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণের আওতায় ১২টি বিদ্যালয় রয়েছে। তবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস না নিয়ে বিকল্প ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অশোক কুমার সমাদ্দার বলেন, প্রতি বছর জেলার সকল বিদ্যালয়ের সংস্কার, অধিক সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ-এই তিন ক্যাটাগরিতে তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার কাজ করা হয়। চলতি বছর খুলনায় এ রকম বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮৬টি। এর মধ্যে অনেক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া বা কাজ শুরু হয়েছে। আর যেসব বিদ্যালয় ভবনের খুবই খারাপ অবস্থা সে ক্ষেত্রে টিন শেড অথবা আশপাশের বিদ্যালয়ে বা অন্য ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।