কোমর সমান জোয়ারের পানি মাড়িয়ে-সাঁতরে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২২

মেঘনা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে প্রায় তিন ফুট পানি বেড়ে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকা ডুবে গেছে। উপকূলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ পানি চলে আসায় ব্যাহত হয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। কোমর সমান পানি মাড়িয়ে ও সাঁতরে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাদের। নদী থেকে ইলিশ শিকারের পর ঘাটে এসে বিপাকে পড়েন জেলেরাও। ইলিশের টুকরি মাথায় নিয়ে বুক সমান পানি মাড়িয়ে ঘাটে উঠতে হয়েছে তাদের।

শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে হঠাৎ জোয়ারে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে দুর্ভোগে পড়েছেন উপকূলবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোয়ারে কমলনগরের চরমার্টিন, চরকালকিনি, চরফলকন, পাটারিরহাট, সদরের চররমনী মোহন, রায়পুরে উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও রামগতির চরআবদুল্লাহসহ প্রায় ১৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

jagonews24

এদিকে কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া বাগারহাট থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়। জোয়ারের কারণে ছুটি পেয়ে কোমর সমান পানি মাড়িয়ে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আবার অনেকে সাঁতরে বাড়ি ফিরেছে। এছাড়া আশপাশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

অন্যদিকে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার মাছঘাট এলাকায় জেলেরা ঘাটে ফিরেছেন। কিন্তু মাছ শিকারে ক্লান্ত শরীরে ঘাটে ফিরে তারা আরও বেশি বিপাকে পড়েন। কূলে উঠতে হয় বুক সমান পানি অতিক্রম করে। এ সময় মাথায় মাছভর্তি টুকরি নিয়ে তাদের কূলে উঠতে হয়েছে।

jagonews24

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত চারদিনের জোয়ারে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের তীব্র স্রোতে ও ভাটার টানে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে। সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াতে চরম বিপর্যয়ে পড়তে হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার মতো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না সড়কের কারণে।

সদর উপজেলা থেকে রামগতি উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নেই। গেলো একনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ৩১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। জানুয়ারিতে কাজ শুরু হলেও এখনো দৃশ্যমান নয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার কাজ রেখে পালিয়েছেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জড়িত। শুধুমাত্র বালু সংকট দেখিয়ে তারা কাজ করছে না। তাদের কারণে প্রতিদিন কেউ না কেউ নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছেন। চাঁদপুরে বালু পাওয়া না গেলে অন্য জায়গা থেকে আনার ব্যবস্থাও তারা করেন না। উপকূলীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগে রেখে তারা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে যাচ্ছেন।

jagonews24

কমলনগরের চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্যা বলেন, ‘তীব্র স্রোতে উপকূলে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। এতে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মানুষ খুব দুর্ভোগে রয়েছে।’

রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নটি চারপাশ মেঘনা নদীতে বেষ্টিত। প্রতিটি ভিটা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। টানা জোয়ারের অনেকে চুলাও জ্বালাতে পারেনি।’

jagonews24

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন টানা জোয়ার হচ্ছে। এতে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে রয়েছে। আমি সবসময় তাদের খোঁজ নিচ্ছি। এছাড়া বাঁধ নির্মাণ কাজটিও বন্ধ রয়েছে। রোববার স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকায় আসবেন, বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।’

লক্ষ্মীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে মেঘনায় প্রায় তিন ফুট পানি বেড়ে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্ষার মৌসুম হওয়ায় নদীতে তীব্র স্রোত রয়েছে। এতে বাঁধ নির্মাণ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বালু সংকটও রয়েছে।’

কাজল কায়েস/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।