বগুড়ার ধুনট
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ‘গরিবের অ্যাম্বুলেন্স’

বগুড়ার ধুনট উপজেলার চিকাশি রোগী পরিবহনের জন্য ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশাকেই রূপ দেওয়া হয়েছিল ‘অ্যাম্বুলেন্স’-এ। উদ্দেশ্য ছিল, জরুরি মুহূর্তে যাতে গ্রামের গরিব অসুস্থ মানুষদের দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া যায়। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফলতা পায়নি। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আর সুব্যবস্থাপনার অভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
সরেজমিন দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি ইউনিয়ন পরিষদের এক কোনায় অবহেলায় পড়ে আছে। মরিচা ধরে নষ্টের পথে অ্যাম্বুলেন্সের বডি। ব্যাটারিসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ অনেক আগেই অকেজো হয়ে গেছে। ফলে প্রায় এক বছর ধরে এটি আর রাস্তায় চলে না।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি-৩) আওতায় অ্যাম্বুলেন্সটি ক্রয়ে খরচ হয়েছিল দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা।
২৪ ঘণ্টা সার্ভিসের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের বডিতে দেওয়া ফোন নম্বর। কল করে ঠিকানা জানিয়ে দিলেই বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে হাজির হতো রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্সটি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সন্তানসম্ভবা নারীসহ মুমূর্ষু রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সহজেই আনা-নেওয়া করা হতো।
অ্যাম্বুলেন্সের চালক গ্রামপুলিশ রতন রবিদাস বলেন, এক বছর আগে প্রায় ১৫০-২০০ রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভাড়ার টাকা নিয়ে দরদাম হতো না। দরিদ্র মানুষ খুব উপকার পেয়েছিলেন।
জোড়শিমুল গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, আমার বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক রোগীকে ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ অন্য একটা গাড়িতে রোগী নিয়ে যেতে খরচ হতো প্রায় ১০০ টাকা।
বড়িয়া গ্রামের কফিল উদ্দিন বলেন, গাড়ির গায়ে লেখা মোবাইল নাম্বারে কল করার সঙ্গে সঙ্গে রাত ১২টায় আমার বাড়ি থেকে জ্বরে আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় এলাকায় অন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যায়নি।
চাপড়া গ্রামের জলিমন বেগম বলেন, আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের প্রসবব্যথা উঠলে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে ধুনট শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমারা অনেক সুবিধা পেয়েছি। অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করা খুবই প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চিকাশি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জুয়েল বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি চালাতেন পরিষদের চৌকিদার। সঠিকভাবে এটি ব্যবহার করা হয়নি। তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছেন। অকেজো অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।
এসআর/জিকেএস