যুবলীগ নেতার বাধায় ৩ জেলায় বোরো ধানের বীজ সরবরাহ বন্ধের অভিযোগ

আল মামুন সাগর আল মামুন সাগর , জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম জোয়ার্দ্দারের বাধায় তিন জেলায় বোরো ধানের বীজ সরবরাহ বন্ধের অভিযোগ উঠেছে। ফলে চার দিন ধরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে বীজ উত্তোলন করতে পারছেন না কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার ডিলাররা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দারের ভাতিজা নঈম জোয়ার্দ্দার। তার কর্মীদের হুমকিতে ২৫ জানুয়ারি সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র থেকে ডিলাররা বোরো ধানের বীজ উত্তোলন করতে পারেননি।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে শুরুতেই ৮০ কোটি টাকার বীজ উৎপাদন

চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নাই। যুবলীগ নেতা নঈম জোয়ার্দ্দার ডিলারদের বীজ দিতে নিষেধ করেছেন। তার বাধায় কোনো শ্রমিকও কাজ করছেন না। ফলে বোরো ধানের বীজ সরবরাহ বন্ধ আছে।’

বিএডিসি সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএডিসির কুষ্টিয়া বিপণন ও চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রকে প্রায় তিন হাজার টন বোরো ধানের বীজ পুনর্নির্ধারিত দামে বিক্রির অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। ১১ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এতে সব চিকন জাতের বীজের দাম প্রতি কেজি ৩৮ টাকা ও মাঝারি চিকন জাতের ৩৭ টাকা এবং মোটা জাতের বীজের দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

ডিলারদের অভিযোগ, বিএডিসির দুই কর্মকর্তার ইন্ধনে যুবলীগ নেতা নঈম জোয়ার্দ্দারের লোকজন বুধবার ডিলারদের একাধিক ট্রাক আটকে দেন। এরপর থেকে বোরো ধানের বীজ উত্তোলন বন্ধ।

আরও পড়ুন: যমুনার বালুচরে সূর্যমুখীর হাসি

চলতি বছর অত্র অঞ্চলে বিএডিসির গমের বীজ সংকটের পেছনে বিএডিসির ওই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশ আছে। বরাদ্দ পাওয়া বীজের মধ্যে আড়াইশ টন বীজ সালাউদ্দিন নামের এক ডিলারকে দিয়ে অধিক দামে বিক্রি করা হয়। ফলে এ অঞ্চলে গমের বীজের সংকট দেখা দেয়।

মেহেরপুরের বীজ ডিলার আরমান আলী বলেন, ‘আমি বিএডিসির সব বীজ সর্বোচ্চ পরিমাণ বিক্রি করি। অথচ বরাদ্দ দেওয়ার সময় লাভজনক বীজ একজন অব্যবসায়ী ডিলারকে বেশি দেওয়া হয়। এর সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। সর্বশেষ বোরো ধানের বীজ বরাদ্দ পাই। পে-অর্ডার দিয়ে বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র থেকে বীজ আনতে যাই। এ সময় বিএডিসির কর্মকর্তারা জানান কোনো বীজ দেওয়া যাবে না। যুবলীগের নেতারা বীজ দিতে নিষেধ করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আমি ধানের বীজ উত্তোলনে বাধা দেইনি। তবে বলেছি, চুয়াডাঙ্গার ডিলাররা কম পেয়েছে। সবাই বসে সমাধান করে ধান উত্তোলন করতে।’

আরও পড়ুন: দেশে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাবে সরিষা

কুষ্টিয়া জেলা বিএডিসি বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুবায়েদ রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষি ভবনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের কারণে সারাদেশে ডিলারদের ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয়ে ওই দুই কর্মকর্তার মনোনীত একজন করে ডিলার আছে। তাদের মাধ্যমে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই দুই কর্মকর্তা।’

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া বিএডিসি বীজ বিপণন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কোনো চাপ নেই। তবে চুয়াডাঙ্গা থেকে ধান উত্তোলনে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে আমিও শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান
করা হবে।’

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।