সাব কনট্রাক্টরের ‘সময়ের অভাবে’ ঝুলে আছে বেগুনটাল সেতুর কাজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল খালের ওপর সেতু নির্মাণ কাজ দুই বছরেও শেষ হয়নি। সময়ের অভাবে কাজটি শেষ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সাব কনট্রাক্টররা। ফলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ খানের নামকরণে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৭৫ টাকা ব্যয়ে ৫০ মিটার গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজের টেন্ডার দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)। সেতু নির্মাণের কাজটি পায় মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সাব কনট্রাক্টরে সেতু নির্মাণ করছেন হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা, বাপ্পি এবং মাহাবুব নাম।

আরও পড়ুন: পটুয়াখালীর ব্যাপক উন্নয়নেও মলিন রাখে প্রবেশ পথের ময়লার স্তূপ

২০২০ সালের ৫ জুলাই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে ৪ এপ্রিল কাজ শেষ করার সময়সীমাও বেঁধে দেয় এলজিইডি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বেগুনটাল সেতুটি নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগায় চরম সমস্যায় আছেন তারা। এ সেতু হয়ে যমুনা নদী পথে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, টাঙ্গাইলের কাকুয়া ও কাতুলী ইউনিয়নসহ হুগড়া ইউনিয়নের পূর্ব হুগড়া, চক গোপাল, সাতানি হুগড়া, ধুলবাড়ী, কচুয়া, বারবয়লা, মহেশপুর, গইরাগাছা, মালতিপাড়া, আনাহলা, চিনাখালী, গন্ধবপুর, বইরাপাড়া, ভাঙ্গাবাড়ী, নরসিংহপুর, গোপাল কেউটিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। সেতু না থাকায় প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ পথে যাত্রীরা।

স্থানীয়দের দাবি, তোফাজ্জল হোসেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা দুবারের সাধারণ সম্পাদক ও হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান। প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। এছাড়া রহস্যজনক কারণে সেতু নির্মাণে দেরি হওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ ইউনিয়নের পশ্চিম অংশের যমুনা নদীর তীরবর্তী গ্রাম কাকুয়া ও কাতুলীর তোরাবগঞ্জসহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই পথ। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন তোফা সেতুটির নির্মাণ কাজ করছেন। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এর কাজ শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন: পৌরসভার ময়লায় বিপর্যস্ত ইউনিয়নবাসীর জীবন

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটি না হওয়ায় বন্ধ আছে ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন ধরনের বড়গাড়ি পারাপার। চলাচলে সুবিধার জন্য সেতুর নিচে একটি বিকল্প পথ তৈরি করা হয়েছে। ওই পথ দিয়ে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল আর হেঁটে মানুষ চলাচল করছেন। তবে পথটি মূল সড়ক থেকে অনেকটা নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যাওয়াসহ শুষ্ক মৌসুমে পারাপারে চরম সমস্যা পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। বিশেষ করে ভোগান্তিতে পড়ছেন নারী, শিশু, বৃদ্ধরা।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ জামাল হোসেন বলেন, দুই বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এর ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে আছি।

ভ্যানচালক মহর আলী বলেন, হুগড়া মসজিদের কাজের জন্য ১০ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে যাচ্ছি। অনেক কষ্ট করেও নিচু রাস্তা দিয়ে উঠতে পারছিলাম না। স্থানীয় কয়েকজন যুবক আমাকে সাহায্য করে ওপরে উঠিয়ে দিয়েছে। এভাবে দুই বছর ধরে মালামাল আনা-নেওয়া করছি।

তিনি আরও বলেন, কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো। সেতুর ঠিকাদার হচ্ছেন আমাদের সাবেক চেয়ারম্যান। ওনাকে কাজ শেষের জন্য তাগাদা দিলে বলেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। এরপর শেষ হয় না।

আরও পড়ুন: খালে পড়ে আছে কালভার্ট, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

 

Tangail-News1.jpg

হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও বেগুনটাল গ্রামের ইউপি সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য পাঁচ বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী তোরাব আলী বলেন, সেতুর মূল কাজের মধ্যে দুটি স্লাব বাদ রয়েছে। তবে এরই মধ্যে সেতুর পিলার, পাইল ও একটি স্লাবের কাজ শেষ হয়েছে। এখনও থেকে কাজ শুরু আর টানা করলে বর্ষার আগে বা এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, কাগজ-কলমে কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের হলেও সেতুর কাজ করছেন হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা, বাপ্পি ও মাহাবুব নামের কয়েকজন ঠিকাদার।

আরও পড়ুন: শেকৃবির দ্বিতীয় ফটকে অসহনীয় যানজট, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে বেগুনটাল সেতু নির্মাণের কাজটি করছি। ব্যক্তিগত কারণে আর ঠিকমতো সময় না দিতে পারায় সেতুর কাজটি সঠিক সময়ে শেষ করা যায়নি।

সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তির কথা স্বীকার করে হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নূরে আলম তুহিন বলেন, সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমি দুই দফায় কাঠের সেতু নির্মাণ করেছি। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে মাটি ফেলে বিকল্প ডাইবেশনটিও আমি করেছি।

তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। তিনি আগামী বর্ষার আগেই সেতুটির কাজ শেষ করার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের ফান্ড সঙ্কট থাকায় সেতু নির্মাণের কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি। পুনরায় সময়সীমা বৃদ্ধি করাসহ ফান্ড দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে।

আরও পড়ুন: সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

সেতুর নির্মাণকাজের রডমিস্ত্রির সহযোগী হৃদয় সরকার বলেন, সেন্টারিংয়ের কাঠ আর রড না থাকায় সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদার রড পাঠাবো পাঠাবো বললেও রড আসছে না।

 

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, রড-সিমেন্টসহ কাজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিসহ প্রকল্পে ফান্ড না থাকার অজুহাত দেখাচ্ছেন ঠিকাদাররা। এ কারণে আমি চলতি অর্থবছরের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়াসহ ঠিকাদারদের কাজ শেষ করতে না পারলে অফিসকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে স্যারেন্ডার করতে বলে দিয়েছি। আর না হয় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে সরকার নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরিফ উর রহমান টগর/জেএস/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।