কক্সবাজারে নলকূপ-মোটরে উঠছে না পানি, সংকট চরমে

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২৪
কুতুবদিয়ার একটি পাড়ায় একমাত্র গভীর নলকূপ থেকে পানি নিতে ভিড়

বৈশাখের খরতাপে দেশব্যাপী বাড়ছে গরমের তীব্রতা। পর্যটন জেলা কক্সবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুপেয় পানির সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পাশাপাশি অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলনে কক্সবাজারে দিন দিন পানির স্তর নিচে নামছে।

অনেক পাড়ার নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ রয়েছে। পানি উঠছে না বৈদ্যুতিক মোটরেও। পানির জন্য গ্রামের পর পর গ্রামে লোকজনের মধ্যে হাহাকার চলছে। যে পাড়ার নলকূপে পানি উঠছে, সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে এসে লাইন ধরে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।

পানি নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে লবণাক্ততা। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়ছে চরম। এ অবস্থা চলতে থাকলে পানিতে ই-কোলাই ভাইরাস বেড়ে গিয়ে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার, পানি, তাপপ্রবাহ, গরম, তাপমাত্রা, দেশজুড়ে-স্পেশালকক্সবাজারে নলকূপ-মোটরে উঠছে না পানি, সংকট চরমে

সুপেয় পানি সংকট উদ্বেগজনক জানিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, কক্সবাজারে সুপেয় পানি সংকট মোকাবিলায় তারা কাজ করছেন।

কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানান, সোমবার (২২ এপ্রিল) কক্সবাজারে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কক্সবাজার, পানি, তাপপ্রবাহ, গরম, তাপমাত্রা, দেশজুড়ে-স্পেশালকক্সবাজারে নলকূপ-মোটরে উঠছে না পানি, সংকট চরমে

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রমতে, ২০১৭ সালে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে পানি সরবরাহ করতে তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে তিন হাজার অগভীর, ৮০টি গভীর এবং এনজিও সংস্থা আরও ২০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। প্রতিদিন রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য ৩০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে শুধু দুই উপজেলায়। অতিমাত্রায় পানি উত্তোলন ও তীব্র গরমের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসানো ৯০ শতাংশ অগভীর নলকূপ থেকে এখন পানি উঠছে না।

আরও পড়ুন:

টেকনাফের হ্নীলা, টেকনাফ সদর, বাহারছড়া, সাবরাং, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লেদা, দমদমিয়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে লবণাক্ততা। উখিয়ায় গরমের তীব্রতা দেখা না দিলেও দিন দিন পানির স্তর নিচে নামছে। কক্সবাজারের ঈদগাঁও সদর, পোকখালী, গোমাতলী, ইসলামপুরের অনেক নলকূপে পানি উঠছে না। অকেজো হয়ে গেছে অনেক বৈদ্যুতিক মোটরও।

কক্সবাজার, পানি, তাপপ্রবাহ, গরম, তাপমাত্রা, দেশজুড়ে-স্পেশালকক্সবাজারে নলকূপ-মোটরে উঠছে না পানি, সংকট চরমে

কক্সবাজার শহরের নুরপাড়া, মাঝিরঘট, টেকপাড়া, নতুন বাহারছড়া, বদরমোকামসহ বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানের পানি পান তো দূরের কথা, গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাবেক সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে ধ্বংস করা হয়েছে প্রায় আট হাজার হেক্টর বনভূমি। একইসঙ্গে প্রতিদিন ভূগর্ভ থেকে যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে মাটির নিচে সুপেয় পানি পাওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় বাড়ছে পানির লবণাক্ততা। এখান থেকে রক্ষা পেতে হলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

ঈদগাঁওয়ের স্কুলশিক্ষক এ কে এম জাহাঙ্গীর জানান, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকা এবং পাহাড়বেষ্টিত গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। নলকূপ অকেজো হওয়ার পাশাপাশি অকেজো হয়ে গেছে অনেক বৈদ্যুতিক মোটরও।

কক্সবাজার, পানি, তাপপ্রবাহ, গরম, তাপমাত্রা, দেশজুড়ে-স্পেশালকক্সবাজারে নলকূপ-মোটরে উঠছে না পানি, সংকট চরমে

একইভাবে পানি সংকট চলছে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপেও। পুরো শুকনা মৌসুমজুড়ে এটি চলমান থাকতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, লবণাক্ততা বাড়লে পান অযোগ্য পানিতে ই-কোলাই ভাইরাস বেড়ে যেতে পারে। ই-কোলাই ভাইরাস বায়বীয় ও অবায়বীয় দুই অবস্থাতেই থাকতে পারে। এ ভাইরাসের কারণে মূত্রনালীতে সংক্রমণ, রক্তে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিস টাইফয়েড, ডায়রিয়া, বমি ও রক্তযুক্ত মল, মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ এবং প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুপেয় পানি সংকট দূর করতে রেইন ওয়েটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প চলমান। বিশেষ করে রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া-টেকনাফকে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে উখিয়ার পালংখালীতে ৬০০ একর জমি লিজ নিতে প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, টেকনাফ, উখিয়া এবং কক্সবাজার শহর ও উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে এমন শঙ্কায় ওয়াটার-এনার্জি-লাইভলিহোড (ওয়েল) নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। চলমান রয়েছে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প। সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুপেয় পানি সংকট দূর হবে। একইসঙ্গে সাগরের লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।