ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সমালোচনার মুখে সরকার


প্রকাশিত: ০৪:৪৯ এএম, ০৩ জুন ২০১৬

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার হয়েও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সিম বা রিম ব্যবহার করে ভয়েস, এসএমএস, ইন্টারনেটসহ সব সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে মোবাইল সিমভিত্তিক সব ধরনের সেবায় গ্রাহকের খরচ আরো একদফা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বৃদ্ধির খবর পেয়ে ফেসবুকে ইতোমধ্যে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সঙ্গে স্ববিরোধী ও  সাংঘর্ষিক বলে মনে করেছেন।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিকশিত হচ্ছে। এই সময় ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স সার্বিকভাবে প্রত্যাহার করা উচিৎ। সেখানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রতি বছর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ভ্রান্তনীতির ফল। এরজন্যে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে।

নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, মোবাইল ফোনের সিমের প্রতিটি সেবার সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক), ১ শতাংশ সারচার্জ এবং ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। এই শুল্ক বর্তমানে ৩ শতাংশ।
এর ফলে ১০০ টাকার টকটাইম বা ইন্টারনেট কিনতে গুনতে হবে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটেও অর্থমন্ত্রী একইভাবে সিমকার্ড ও রিমভিত্তিক সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক করারোপ করেছিলেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং টেলিযোগাযোগ শিল্প সংশ্লিষ্টদের কঠোর সমালোচনার মুখে অর্থমন্ত্রী সেই কর তিন শতাংশে নামিয়ে আনেন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসআরও জারির মাধ্যমে নতুন করে ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করে আবারও গ্রাহকের ঘাড়ে করের বোঝা বাড়ানো হয়।

নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সেই এক শতাংশ সারচার্জ রেখে আরো দুই শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এর ফলে ১০০ টাকা মূল্যের একটি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে একজন গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে ১২১ টাকা। দেখা যাচ্ছে, নতুন করারোপের ফলে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্য সাধারণ গ্রাহকের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে।

গ্রাহকের ঘাড়ে এই বাড়তি করের বোঝায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বর্তমানে বিদেশ সফরে থাকা অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল ফোন অপারেটর্স বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী টি আই এম নুরুল কবীর।

তিনি বলেন, সিমকার্ড কিংবা রিমের ওপর দুই শতাংশ সম্পূরক কর সার্বিকভাবে মোবাইল সেবার খরচ বাড়িয়ে দেবে। এর ফলে গ্রাহকদের কাছে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ কঠিন হয়ে পড়বে।

কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, অনেক গ্রাহক বাড়তি করসহ মূল্য পরিশোধে সমর্থ হবেন না, ফলে তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। সেবা সম্প্রসারিত না করতে পারলে মোবাইল অপারেটররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের করারোপ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বাজেট প্রস্তাব পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, নতুন করারোপের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকরা। বর্তমানে মোবাইল অপারেটররা গড়ে এক গিগাবাইট ডেটা ব্যবহারের দাম রাখছেন ২৭৫ টাকা। তবে গ্রাহককে এই এক জিবি ডেটা প্যাকেজ কিনতে বর্তমানে ১৯ শতাংশ করসহ পরিশোধ করতে হয় ৩২৭ টাকা ২৫ পয়সা। অর্থাৎ, কর বাবদ বাড়তি পরিশোধ করতে হয় ৫২ টাকা ২৫ পয়সা।

নতুন অর্থবছরে দুই শতাংশ সম্পূরক কর বৃদ্ধির কারণে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে ৩৩২ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ, এক জিবি ডেটা প্যাকেজের জন্য গ্রাহককে বাড়তি ৫৭ টাকা ৭৫ পয়সা কর পরিশোধ করতে হবে।

একাধিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোবাইল ইন্টারনেটের বড় অংশের গ্রাহক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে এই শিক্ষার্থীদের জন্য ৫৭ টাকা বাড়তি কর একটি বড় বোঝা হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে প্রচুর সংখ্যক মানুষ মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্কাইপ কিংবা ভাইবার ব্যবহার করে বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনের বেশিরভাগই থাকেন গ্রামে। গ্রামের স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষকেও মোবাইল সেবার জন্য অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে গত এপ্রিল পর্যন্ত মোট ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ২০ লাখ ৪ হাজার। মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার। তার এক মাস আগে ছিল ৫ কোটি ৮৩ লাখ আর জানুয়ারিতে ছিল ৫ কোটি ৬১ লাখ।

গতবছর মার্চে বাংলাদেশে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার মানুষ ইন্টারনেট সেবা কিনতেন। এই হিসেবে বছরে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। বিটিআরসির তথ্যে দেখা যায়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৫ শতাংশ এ সেবা নিচ্ছেন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

আরএম/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।