‘বাংলাদেশি খেলনা রপ্তানিতে বিপুল সম্ভাবনা, আগ্রহী ব্রিটেন’
ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বলেছেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত খেলনা পণ্য রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রিটিশ সরকার এখাতে সহযোগিতা করতে বেশ আগ্রহী। বিদ্যমান নীতিমালার সংস্কার ও প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা সম্ভব হলে ব্রিটেনে এ খাতের পণ্যের রপ্তানি আরও বহুগুণ বাড়বে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণ: খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন ও রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মার্টিন ডওসন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে মার্টিন ডওসন বলেন, ব্রিটিশ সরকার সম্প্রতি রুলস অব অরিজিনের শর্তাবলি সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবে। এনবিআর শিল্পখাতের কাঁচামালের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিরসন করেছে, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক রপ্তানি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এনবিআারের সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের ওপর নজর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সহজীকরণ ও বন্ডেড সুবিধা প্রদানে কাজ করছে।
মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, ২০২৩ সালে প্রণীত ট্যারিফ নীতিমালা অনুসারে রাজস্ব বিভাগ শুল্ক আরোপ করে এবং এক্ষেত্রে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কিছু সুপারিশ থাকে, যা মেনে চলতে হয়। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে কোনো নীতিসহায়তা পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই, তবে আগামী বছর বাজেট প্রণয়নে এ খাতের প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
এনবিআর সদস্য মুবিনুল বলেন, ৪০ বছর ধরে তৈরি পোশাকখাতে সহায়তা দেওয়া হলেও এ খাতের সক্ষমতা কতটুকু বেড়েছে তা নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। তাই খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রাপ্তির চাইতে নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং পণ্যের উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বেশি হারে মনোযোগী হওয়ার ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিপিজিএমইএ’র সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি খেলনা সামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এ খাতে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত।
শামীম আহমেদ আরও বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনা সামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫ দশমকি ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৮টি দেশে রপ্তানির মাধ্যমে তা ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক ড. অশোক কুমার রায়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের জয়েন্ট চিফ (ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেট ডিভিশন) মো. মামুন-উর রশিদ আসকারী, গোল্ডেন সন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহেমদ, কাপকেক এক্সপোর্টার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসির ওবায়েদ, প্রেমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিকস লিমিটেডের ডেপুটি এক্সিকিউটি ডিরেক্টর মো. আনিসুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বর্জ্য এবং কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা) ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির প্রোপ্রাইটর আমান উল্ল্যাহ, হ্যাসি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মুসা বিন তারেক এবং রেডমিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক অংশগ্রহণ করেন।
ইএআর/এমএমকে/এএসএম