সংকট মুহূর্তে ‘বিলাসী প্রকল্প’

ডিআইএ’র দুই দপ্তর করতে ব্যয় ১৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২৩ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) ভেঙে দুটি দপ্তর গঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এ মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক ব্যয় ৮-১০ কোটি টাকা। এটি দুই ভাগে বিভক্ত হলে এ ব্যয় হবে দ্বিগুণ। ডিআইএকে রূপান্তর করা হবে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অধিদপ্তরে। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য জানায়।

জানা যায়, জনবল ও দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই পুনর্গঠন চেয়েছিল ডিআইএ। দুটি দপ্তর গঠনের প্রক্রিয়াকে অযৌক্তিক দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও বিরাজ করছে। সংকট মোকাবিলায় বিলাসবহুল প্রকল্প বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে। নিজের পছন্দে দুটি বিভাগের নামকরণও স্থগিত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন সংকট পরিস্থিতিতে দুটি দপ্তর গঠন করা ‘বিলাসী প্রকল্প’ হিসেবে দেখছেন তারা।

ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক জটিলতার শঙ্কা
এ বিষয়ে ডিআইএর যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার জাগো নিউজকে বলেন, নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান খোলা হলে সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকার চেষ্টায় থাকেন। তাদের দাপটে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা পিছনে পড়ে যান। আবার দপ্তর দুটিতে আলাদা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলে স্বাভাবিকভাবে উভয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেবে।

আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে অটল ডিআইএ, সংকট জনবলের

ব্যয় বাড়ার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ডিআইএর বার্ষিক খরচ প্রায় আট থেকে ১০ কোটি টাকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের অনিয়ম তদন্তের মাধ্যমে প্রতিবছর গড়ে ২০ কোটি টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়। জনবল বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণসহ ডিআইএর সক্ষমতা বাড়াতে ১৪৯ কোটি ৬৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার একটি স্কিম দেওয়া হয়েছে। ‘বিলাসী প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর সরকারকে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিতে হবে।

ডিআইএ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা
ডিআইএর সক্ষমতা বাড়াতে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) থেকে অপর একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনার আলোকে ডিআইএর সক্ষমতা বাড়াতে তিনটি প্রস্তাবনা দেয় ডিআইএ পুনর্গঠন কমিটি। এর মধ্যে আছে, ডিআইএর প্রস্তাবিত পুনর্গঠন পরিকল্পনা, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর সুপারিশ এবং ডিআইএর বিদ্যামান কাঠামোর মধ্যে পুনর্গঠন। এর মধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে ডিআইএ পুনর্গঠনে এমন উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

ডিআইএর পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পিয়ার ইন্সপেকশন সফটওয়্যার ও অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে সব প্রতিবেদন নির্ভুলভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব। এছাড়াও জনবল বাড়ানো ও তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার বিষয়ে জানানো হয়েছে। অধিদপ্তরগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো, অর্গানোগ্রাম এবং কর্মপরিধি নির্ধারণের কাজ করছেন। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ হতে পারে। এজন্য একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে। সেখানে মতামত নেওয়া হবে অংশীজনদের। এর আগে কমিটি থেকে কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরও পড়ুন: বেহাত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি, যাচাই করছে ডিআইএ

প্রস্তাবনা মতে, প্রধান শিক্ষা পরিদর্শকের কার্যালয়ের কাজ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, একাডেমিক মান নির্ণয় করে প্রতিবছর এগুলোর র‌্যাংকিং নির্ধারণ এবং উন্নয়নের পরামর্শ দেওয়া। এই কার্যালয়ের কার্যাবলী ও সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণের উদ্যোগ নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

ডিআইএর সক্ষমতা বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন অধিদপ্তর গঠন করা হবে। যার দায়িত্ব হবে শুধু আর্থিক অডিট পরিচালনা করা। সক্ষমতা বাড়াতে এর সাংগঠনিক উন্নয়ন (এডি), মানবসম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি) এবং অবকাঠামো উন্নয়ন (আইডি) এ তিন অনুষঙ্গকে বিবেচনায় নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পিয়ার ইন্সপেকশন সফটওয়্যার ও অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে সব প্রতিবেদন নির্ভুলভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব। এছাড়াও জনবল বাড়ানো ও তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার বিষয়ে জানানো হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ডিজিটালাইজড হচ্ছে ডিআইএ

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জাগো নিউজকে বলেন, ডিআইএ পুনর্গঠনে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা অধিদপ্তরগুলোর সংগঠনিক কাঠামো, অর্গানোগ্রাম ও কর্মপরিধি নির্ধারণের কাজ করছেন। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ হতে পারে। এজন্য একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হবে। এর আগে কমিটি থেকে কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নতুন প্রস্তাবনায় দেখা যায়, প্রধান শিক্ষা পরিদর্শকের কার্যালয়ের কাজ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, একাডেমিক মান নির্ণয়পূর্বক প্রতিবছর এগুলোর র‌্যাংকিং নির্ধারণ এবং উন্নয়নের পরামর্শ দেওয়া। এই কার্যালয়ের কার্যাবলী ও সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণের উদ্যোগ নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অন্যদিকে ডিআইএর সক্ষমতা বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন অধিদপ্তর গঠন করা হবে। যার দায়িত্ব হবে শুধু আর্থিক অডিট পরিচালনা করা। সক্ষমতা বাড়াতে সাংগঠনিক উন্নয়ন (এডি), মানবসম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি) এবং অবকাঠামো উন্নয়ন (আইডি)- এ তিন অনুষঙ্গকে বিবেচনায় নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানতে চাইতে মাউশির সাবেক মহাপরিচালক ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ডিআইএকে কার্যকর করা জরুরি। দুটি ভাগে করলে এর কর্মক্ষমতা বাড়বে। তবে ব্যয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে সেটি করতে হবে। আমি মনে করি এটি ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে।

এমএইচএম/এএসএ/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।