শিক্ষাক্রম বাতিল দাবি
ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন অভিভাবকরা, কর্মসূচি ঘোষণা শুক্রবার

নতুন প্রণীত শিক্ষাক্রম বাতিল দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন অভিভাবকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রুপ খুলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করেছেন তারা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ৫০-৬০ জন অভিভাবক বৈঠক করেন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজেদের ‘সচেতন অভিভাবক’ ব্যানারে আরেকটা বৈঠক ডেকেছেন। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ বৈঠক হবে।
শুক্রবারের বৈঠক থেকে শিক্ষাক্রম বাতিল দাবিতে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তাদের কয়েকজন। তাছাড়া দাবি-দাওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালানো এবং সচেতনতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করবেন।
এদিকে, বৈঠকে আলোচনার পর প্রেস ক্লাবের সামনে বা শাহবাগ মোড়ে অথবা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কোনো অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি করার ঘোষণাও আসতে পারে। যদি মানববন্ধন কর্মসূচি না দেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষাক্রমের সমস্যা নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করতে পারেন তারা।
শুক্রবার বৈঠকে যোগ দেবেন এমন অন্তত পাঁচজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। তাদেরই এজন তাহেরা আক্তার রূপা। তার মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
আরও পড়ুন: ‘পরীক্ষাবিহীন’ পড়াশোনায় আস্থা নেই অভিভাবকদের
তাহেরা আক্তার রূপা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ শিক্ষাক্রম নিয়ে আমরা বড় বিপদে আছি। খরচ বেড়েছে, বাচ্চাদের চাপও বেড়েছে। আবার পরীক্ষা নেই। মূল্যায়ন পদ্ধতিও আজগুবি। পরীক্ষাবিহীন এমন শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের সন্তানদের ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এজন্য আমরা একটা মিটিং করেছি। শুক্রবার আরেকটা মিটিং করবো। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে, সামনে কী কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
মারজান আক্তার নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘পরীক্ষা ছাড়া এটা কেমন শিক্ষাক্রম? বাচ্চারা কোনো পড়ালেখা করছে না। তাদের এমন সব কঠিন কাজ দেওয়া যাচ্ছে, যা করতে রাত ২-৩টা বেজে যাচ্ছে। আমরা এমন শিক্ষাক্রম চাই না। সব অভিভাবকই এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন। অসংখ্য অভিভাবক এ শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। এজন্য আমরা সংগঠিত হয়ে এটা বাতিলে দাবি জানাবো।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান করানো হবে। অর্থাৎ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সব শ্রেণিতে পুরোদমে চালু হয়ে যাবে নতুন শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতিও ভিন্ন। শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষক হতে শিক্ষক-সুপারভাইজারদের আবেদন শুরু
চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে ২০২৫ সালে। ওইবছর অর্থাৎ ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ নম্বরের সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও করা হবে একইভাবে। তবে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে।
অন্যদিকে নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার পর দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি বিষয় নির্ধারণ থাকবে। সেগুলো সবাই পড়বে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ঐচ্ছিক বিষয়গুলো পড়বেন শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যে বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিক থেকে।
উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে এ প্রক্রিয়া মেনে পাঠদান করানো হবে। ওই বছর থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ পদ্ধতি বাতিল করা হবে। মূল্যায়ন হবে চিহ্নভিত্তিক।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম চূড়ান্ত করার পর পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী- বাস্তবায়ন করাও হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রায় সব স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম পুরোদমে চালু হয়ে যাবে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে।’
অভিভাবকদের এমন সক্রিয় হওয়াকে ইতিবাচক বলছেন নতুন শিক্ষাক্রম প্রণেতাদের অন্যতম অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। তিনি এনসিটিবির শিক্ষাক্রম উইংয়ের সদস্য। অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘অভিভাবক সচেতন হয়ে এটা নিয়ে আলাপ তুললে আলোচনা করা এবং বোঝানো সহজ হবে। আমার বিশ্বাস- তাদের আমরা বোঝাতে সক্ষম হবো এবং তারা শিক্ষাক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে।’
অন্যদিকে নতুন শিক্ষাক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে বলে মনে করেন ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম প্রণয়ণ কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম এ দেশে এখনো উপযোগী হয়ে ওঠে না। শিক্ষা কাঠামোর সব সেক্টরকে আগে উপযোগী করে, তারপর এটা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি ছিল।’
এএএইচ/এমআরএম