অভিনেত্রীকে ধর্ষণে মামলা, নির্মাতা বললেন, ‘ভাইরাল হওয়ার নেশা’
অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অভিনেত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। নাট্যনির্মাতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ মাসুদ, তার সহযোগী বাবর ও আরও এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন অভিনেত্রী তাছলিমা খাতুন আয়েশা। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।
আয়েশার অভিযোগ, শুটিংয়ের কথা বলে গত সপ্তাহে গভীর রাতে তাকে গাজীপুরের ‘রাস’ রিসোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমে পরিচালক নাসিরউদ্দিন মাসুদ ও সহকারী বাবর তাকে ধর্ষণ করেন। পরে রিসোর্ট মালিকপক্ষের লোক পরিচয় দেওয়া এক বয়স্ক ব্যক্তি তাকে আবারও ধর্ষণ করেন। ঘটনাস্থল থেকে বের হওয়ার সময় বাবর তার আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী আরও জানান, ‘প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে পূবাইলে শুটিং চলাকালে পরিচালক মাসুদ আমার নম্বর নেন। এরপর থেকে নিয়মিত ফোন দিতেন এবং দু-একটি নাটকে কাজও করেছি। সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই তিনি আমাকে ফাঁদে ফেলেন।’
২২ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাকে রিসোর্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে রিসোর্টে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেছি। প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের পাশাপাশি রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও খতিয়ে দেখা হবে।’
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা গণমাধ্যমে দাবি করেন, ‘আমরা শুধু বুকিং দিই। রিসোর্টের ভেতরে কী হয় তা জানি না।’
নির্মাতাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলার কপি
এদিকে অভিযুক্ত পরিচালক নাসিরউদ্দিন মাসুদ পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ওই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসা করার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, ‘এই মেয়ের মূল পেশা দেহ ব্যবসা। তার মামলা চালানোর ক্ষমতা নেই। ওকে কেউ চালাচ্ছে। মামলার যদি সঠিক তদন্ত করা হয় তাহলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’
ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এরকম অভিযোগ আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাছলিমা খাতুন আয়েশা ভাইরাল হওয়ার নেশায় এগুলো করছে। সে কীসের অভিনেত্রী। কোথায় কাজ করেছে। আমি ২৪ বছর ধরে থিয়েটার করি। অভিনয়ের ওপর পড়াশোনা করেছি। আর ওই মেয়ের কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন নিজেকে অভিনেত্রী পরিচয় দিলেই তো হয়ে গেল না। সে ভাইরাল হতে এগুলো করছে। তাকে দিয়ে কেউ করাচ্ছে এসব।’
‘মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন এরকম একজন শিল্পী এক নাটকের সেটে তাছলিমা খাতুন আয়েশার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করে দেন। এরকম অনেকেই অনেককে পরিচয় করিয়ে দেন, অভিনয়ের সুযোগ দিতে বলেন। এই মেয়ের সঙ্গে সেভাবেই আমার পরিচয়। তাকে আমি কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম আমি একটি কাজে যাব। তখন সে বলে আপনার সঙ্গে দেখা হয় না; তাহলে আমিও সাথে যাই। তখন তাকে বলি, আমি কিন্তু অনেক দূরে যাব। সে উত্তরে বলে, অসুবিধা নাই আমি কিছু ছবি তুলব ফেসবুকে পোস্ট করতে ও রিলস বানাতে। আমরা সকালবেলা ওখানে গেছি এবং বারোটা একটার দিকে ফিরে এসেছি। কিন্তু সে যে আমাকে ফাঁসিয়ে দেবে কখনও ভাবিনি’- হতাশা প্রকাশ করে বলেন নির্মাতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ মাসুদ।
তবে ঘটনাটি শোবিজে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। নাট্যকর্মীরা এর সঠিক তদন্ত করে দোষীর বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এলআইএ/এএসএম