অতিরিক্ত রাগ কীসের লক্ষণ

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২৫

রাগ মানুষের স্বাভাবিক আবেগের একটি অংশ। যখন আমরা হুমকি, অবিচার বা অন্যায়ের মুখোমুখি হই, তখন মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা নামক অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে।

এতে শরীরে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল নামের হরমোন বের হয়, যা আমাদের সতর্ক ও প্রতিরক্ষামূলক করে তোলে। ফলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বাড়ে, আর মস্তিষ্ক ‘লড়াই বা পালানো’র (ফাইট অর ফ্লাইট) জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে। এই পুরো প্রক্রিয়ার বাইপ্রোডাক্ট বা প্রভাব হিসেবে আসে রাগ, যা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।

কিন্তু যখন সামান্য কারণেও হঠাৎ তীব্র রাগ হয় বা বারবার অযৌক্তিকভাবে মেজাজ গরম হয়ে যায়, তখন এটি ভেতরে লুকিয়ে থাকা শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এমন অনিয়ন্ত্রিত রাগ থেকেই আসে প্রতিহিংসা ও হিংস্রতা, যা ব্যক্তিগত জীবন ও সমাজের জন্য সমস্যাজনক।

আজ (২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষে নিজের মেজাজ নিয়ে একটু ভাবুন। জেনে নিন অতিরিক্ত রাগ কীসের লক্ষণ ও তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন-

অতিরিক্ত রাগের কারণ

  • ১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

অফিসের চাপ, পারিবারিক সমস্যা কিংবা আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে মানুষ খুব সহজেই রেগে যায়। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ অল্পতেই মেজাজ খারাপ করে দিতে পারে।

  • ২. বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন

অনেকে ভাবেন বিষণ্নতা মানেই শুধু দুঃখ বা হতাশা। আসলে এর বড় একটি উপসর্গ হলো রাগ ও বিরক্তি। ডিপ্রেশনে ভুগলে সহনশীলতা কমে যায়, ফলে অল্পতেই রাগ প্রকাশ পায়।

অতিরিক্ত রাগ কিসের লক্ষণ

  • ৩. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

থাইরয়েডের সমস্যা, হরমোনের ওঠানামা কিংবা বয়সজনিত শারীরিক পরিবর্তন রাগ বাড়াতে পারে। বিশেষ করে হরমোনাল ইমব্যালান্সে আবেগের ওঠানামা বেশি দেখা যায়।

  • ৪. ঘুমের অভাব ও আসক্তি

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়। এতে মন খারাপ, বিরক্তি ও রাগ বেড়ে যায়। আবার নেশাজাতীয় দ্রব্য বা অ্যালকোহলও আচরণে অস্বাভাবিক রাগের জন্ম দিতে পারে।

  • ৫. ব্যক্তিত্বজনিত সমস্যা

কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাগ ব্যক্তিত্বজনিত ব্যাধি বা মানসিক রোগের ইঙ্গিত দেয়। যেমন— ইমপালস্ কন্ট্রোল ডিজঅর্ডার বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের রোগীদের রাগের প্রবণতা সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি হয়।

অতিরিক্ত রাগ কিসের লক্ষণ

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

কথায় কথায় অতিরিক্ত মেজাজ খারাপ হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে এই উপায়গুলো অবলম্বন করে দেখুন-

>> গভীর শ্বাস নিন: হঠাৎ রাগ উঠলে কয়েক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে গভীর শ্বাস নিলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা হয়।

>> সময় নিন: কোনো বিষয়ে রাগ হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে কিছুটা সময় নিন, পরে শান্তভাবে উত্তর দিন।

>> হাঁটুন বা নড়াচড়া করুন: শরীর সক্রিয় করলে চাপ কমে এবং মাথা ঠান্ডা হয়।

>> সমাধানের কথা ভাবুন: অভিযোগ না করে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।

>> ভালো ঘুম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত ঘুম আর স্বাস্থ্যকর খাবার মানসিক ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।

>> বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন: এসব করার পরেও রাগ যদি বারবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

রাগ আমাদের জীবনের স্বাভাবিক আবেগের অংশ হলেও অতিরিক্ত রাগ অনেক সময় ভেতরে লুকিয়ে থাকা সমস্যার সংকেত দেয়। তাই রাগ অবহেলা না করে এর উৎস খুঁজে বের করা এবং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

তথ্যসূত্র: আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ), মায়ো ক্লিনিক, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ (এনআইএমএইচ)

এএমপি/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।