১১ বছরেও দেখাতে পারেননি সনদ

দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে মোদীর বিএ পাস নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়লো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার বিএ পাসের সনদ নিয়ে প্রতীকী ছবি/ এআই দিয়ে তৈরি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আদৌ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনার অবসান আর ঘটলো না। দিল্লি হাইকোর্ট সোমবার (২৫ আগস্ট) দেওয়া এক রায়ে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি প্রকাশে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য নয়। একই সঙ্গে বিজেপি নেত্রী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশেও বাধ্য নয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বিচারপতি সচিন দত্ত রায়ে মন্তব্য করেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘ব্যক্তিগত তথ্যের আওতাভুক্ত’, তাই তা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক নয়। তথ্য অধিকার আইনের (আরটিআই) অধীনে এ ধরনের দাবি ‘জনস্বার্থ’ হিসেবে গণ্য হয় না।

সোমবার (২৫ আগস্ট) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে আদালতে শুনানিতে অংশ নেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তার বক্তব্য, তথ্য কমিশনের নির্দেশ মানা হলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নথি থাকলেও, প্রকাশ করা হলে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

আরও পড়ুন: 

মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। ১১ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে, একাধিক মামলাও হয়েছে। কৈশোরে বাড়ি ছাড়ার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি বলে একসময় নিজেই দাবি করেছিলেন মোদী। অথচ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হঠাৎ করেই প্রকাশিত হয় যে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দুটি ডিগ্রির অনুলিপিও প্রকাশ করা হয়। তখন থেকেই শুরু হয় এই বিতর্ক।

নির্বাচনী হলফনামায় মোদী উল্লেখ করেছিলেন, তিনি ১৯৭৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বহিরাগত ছাত্র’ হিসেবে ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্সে’ স্নাতক পাস করেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন কোনো বিষয় কখনোই ছিল না।

আবার মোদী যে সময়ের কথা উল্লেখ করেন, সেসময় হাতে লেখা প্রশংসাপত্র দেওয়া হলেও তার প্রদর্শিত সনদটি ছিল ছাপানো, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে তৈরি ফন্ট। একইভাবে ১৯৮৩ সালে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাস করেন বলে দাবি করেন মোদী, যা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

আরও পড়ুন: 

অন্যদিকে, স্মৃতি ইরানির স্কুল পরীক্ষার ফল নিয়েও একসময় বিতর্ক তৈরি হয়। আরটিআই আইনের আওতায় আবেদন করে অনেকেই তার ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মোদীর ডিগ্রি ও সিবিএসইকে ইরানির ফল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মানতে অস্বীকার করে, ফলে একাধিক মামলা হয়।

এর আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও মোদীর ডিগ্রির সনদ প্রকাশের দাবি তুলেছিলেন। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকাশের নির্দেশ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা মানতে অস্বীকার করে। পরে কেজরিওয়াল গুজরাট হাইকোর্টে মামলা করেন। কিন্তু আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তি মেনে নেন ও কেজরিওয়ালকে মামলার জন্য ২৫ হাজার রুপি জরিমানা করেন।

সবশেষ এক দশকের বেশি সময় ধরে আলোচিত মোদী ও স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত রয়ে গেলো। আদালতের সর্বশেষ রায়ে বিষয়টি আরও বেশি রহস্যাবৃত হয়ে উঠলো।

সূত্র: দ্য হিন্দু

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।