পেশোয়ার : সময় গেলেও কাটেনি আতঙ্ক
তালেবান হামলায় পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ১৩৬ শিক্ষার্থীসহ ১৪৭ জন নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেখানকার মানুষের মনে আতঙ্ক ও বেদনা এখনও কাটেনি। অনেকেই ভাবছেন পাকিস্তান ত্যাগই এখন স্বাভাবিক জীবন-যাপনের একমাত্র উপায়। খবর : টাইম।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ার। শহরটি গত ১০ বছর ধরে তালেবানের তাণ্ডব ও রক্তপাতের অনেক মর্মন্তুদ দৃশ্য দেখেছে। বলা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে পেশোয়ার তালেবান জঙ্গিদের আক্রোশের অন্যতম প্রধান একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের ওই স্কুলে হামলা আগের সব ভয়াবহতাকে ছাপিয়ে গেছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্গ্নোবাল টেরোরিজম ইনডেক্সের মতে, ওই হামলা পুরো পাকিস্তানের ইতিহাসেই এক বর্বরতম হামলার ঘটনা। যদিও ইরাক ও আফগানিস্তানের পর পাকিস্তানই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাস আক্রান্ত দেশ।
স্কুলে হামলার পর তালেবান এ ধরনের আরও হামলা চালানোর হুমকি দেয়। এ অবস্থায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। সড়কে সড়কে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়। কর্তৃপক্ষের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও আতঙ্ক কাটেনি পেশোয়ারবাসীর। সেখানকার এক নারী বলেন, ক্লাস রুমে নিহত হওয়ার চেয়ে তার সন্তানরা অশিক্ষিতই থাকুক, এতে তার আপত্তি নেই। তিনি তার সন্তানদের স্কুল পাল্টেছেন। তিনি বলেন, যখন শুনলাম জঙ্গিরা সব বেসরকারি স্কুলে হামলা চালাতে পারে, তখন আমি তাদের স্কুলেই পাঠানো বন্ধ করে দিলাম। জঙ্গিদের পাকিস্তান থেকে উৎখাতে কর্তৃপক্ষ যে চেষ্টা চালাচ্ছে আমি তাতে মোটেও সন্তুষ্ট নই। সামান নামের নয় বছরের এক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলে যাওয়ার কথা মনে হলেই সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তার সব সময় মনে হয় ১৬ ডিসেম্বরের মতো কিছু তার স্কুলেও ঘটে যেতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক নাসরিন গুফরান বলেন, তারা মানসিক চাপ, অবসাদ ও আতঙ্কে ভুগছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও তারা সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ লোকের দেহ তল্লাশি চালায়। কোনো কর্মকর্তাকে তল্লাশি করে না। এটি নিরাপত্তা নিয়মের লঙ্ঘন। ছাত্ররা বলছে, আমরা নিজেরাই ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি কি-না। পেশোয়ারের অনেকেই মনে করছেন নিরাপদে জীবন পার করতে হলে তাদের দেশ ছাড়তে হবে। পেশোয়ারের ওই স্কুলে হামলার দিন নওয়াজ খানের দুই ছেলে উপস্থিত ছিল। ছোট ছেলেটি হামলায় মারা যায়। বড়টি এখনও হাসপাতালে। নওয়াজ মনে করেন, পাকিস্তান তাদের জন্য আর নিরাপদ নয়। তিনি এখন বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তার পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।