দুই মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রে
যুক্তরাষ্ট্রে আবারও দৈনিক সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। দেশটিতে শুক্রবার নতুন করে ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। গত দু'মাসের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে টানা পাঁচদিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তবে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যাও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ইন্ডিয়ানা, মিনেসোটা, মিসৌরি এবং ওহাইয়োসহ ১০ অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে।
এদিকে, উইসকনসিন এবং ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি পশ্চিমাঞ্চলীয় মোনটানা, নিউ মেক্সিকো, উয়েওমিং, ওকলাহোমা এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যেও দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে।
অক্টোবরের শুরু থেকেই ১৯টি অঙ্গরাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতিকে কম গুরুত্ব দেওয়া এবং সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে প্রথম থেকেই সমালোচিত হয়ে আসছে ট্রাম্প প্রশাসন। এদিকে, এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনদিন হাসপাতালে কাটিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রায় ডজনখানেক মানুষের দেহে এর মধ্যেই করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। অ্যামি কোনি ব্যারেটেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনয়ন দেওয়ার ওই অনুষ্ঠানকেই স্থানীয়ভাবে করোনা সংক্রমণের মূল উৎস বলে মনে করছেন দেশটির জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থার পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি।
তিনি বলছেন, সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে ওই আয়োজনের সম্পর্ক রয়েছে। মূলত এই আয়োজন থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করেন তিনি। হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডা ফাউসি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত বিচারকের নাম প্রকাশের ওই অনুষ্ঠানই মূলত একটি ‘সুপারস্প্রেডার’।
২৬ সেপ্টেম্বরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রায় ডজনখানেক মানুষের দেহে এর মধ্যেই করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। ওই অনুষ্ঠানের পরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, দুই সিনেটর, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি, হোয়াইট হাউসের সাবেক কাউন্সেলর কেলিয়ানে কনওয়েসহ কমপক্ষে ১১ কর্মকর্তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
হোয়াইট হাউসের একের পর এক কর্মকর্তা এমনকি প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে আবারও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। এমনকি তার করোনায় আক্রান্তের ১৪ দিন এখনও পার হয়নি। এর মধ্যেই শনিবার হোয়াইট হাউসের ব্যালকনি থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
এছাড়া আগামী সোমবার কেন্দ্রীয় ফ্লোরিডায় যাওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেখানেই প্রথম নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি। রয়টার্স জানিয়েছে, আরকানসাস, কানসাস, মিসৌরি, মোনটানা, নর্থ ডেকোটা, ওকলাহোমা এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে শুক্রবার রেকর্ড সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৭৮ লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৫ জন। দেশটিতে ইতোমধ্যেই করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৪ জন। বর্তমানে করোনার অ্যাক্টিভ কেস ২৬ লাখ ১১ হাজার ৬৬৯ এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ১৪ হাজার ৭৭৭ জন।
টিটিএন/পিআর