বার্লিন প্রাচীর পতনের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন


প্রকাশিত: ০৩:১৭ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৪

জার্মানি ঐতিহাসিক বার্লিন প্রাচীর পতনের ২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন শুরু করেছে। ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর ইউরোপের শীতল যুদ্ধের আনন্দজনক অবসান উপলক্ষে রোববার এক বিশাল অনুষ্ঠানের আগে পূর্ব জার্মানির নিপীড়নমূলক শাসন থেকে পালাতে গিয়ে নিহতদের স্মরণে তিন দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠান চলছে। পূর্ব জার্মানিতে বেড়ে ওঠা বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

‘স্বাধীনতার জন্য সাহসিকতা’ শীর্ষক উৎসব এক শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে ২৮ বছর পর পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট কর্তৃপক্ষকে সীমান্ত খুলে দিতে বাধ্য করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ঘটনার এক বছরের মধ্যে ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর দুই জার্মানি পুনঃএকীভূত হয়।

একটা ঐতিহাসিক দিন, জার্মানদের নিজস্ব দিন - এবং সেই সঙ্গে আরো অনেক কিছু, বিশেষ করে সাবেক পূর্ব জার্মানির মানুষদের কাছে৷ কিন্তু ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্র এবং সেই সঙ্গে ইউরোপের পক্ষে দিনটার তাৎপর্য কম নয়৷

১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর৷ দিনটা ছিল এক আশ্চর্য দিন৷ সন্ধ্যায় সেই আমলা-মার্কা ঘোষণা, ‘এখন থেকে সবার যাতায়াতের স্বাধীনতা থাকবে`৷ সেখান থেকে শুরু করে সে`রাতে বার্লিন প্রাচীরের পতন অবধি মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জার্মান তথা ইউরোপীয়দের জীবন পাল্টে যায়৷ কম্যুনিস্ট শাসিত পূর্ব জার্মানি গণআন্দোলন আর পলায়নপর নাগরিকদের চাপে ভেঙে পড়ে৷ বার্লিন প্রাচীরের পতনের সঙ্গে সঙ্গে জিডিআর`এর অন্ত ঘটে - যদিও পুনরেত্রীকরণ ঘটে তার এক বছর পরে৷ জিডিআর`এর অস্তিত্বেরই আর কোনো কারণ থাকে না - এক ওয়ারশ` জোটের সদস্যতা ছাড়া৷

তা সত্ত্বেও গর্বাচভ`এর নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং সেই সঙ্গে পূর্ব বার্লিনের ক্ষমতাসীন শাসকরা বলপ্রয়োগ করা থেকে বিরত থেকেছেন৷ বেইজিং`এর স্বর্গীয় শান্তির চত্বরে যেমনটা হয়েছে, তেমন কোনো ‘‘চৈনিক সমাধান`` পূর্ব জার্মানির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়নি৷ ১৯৫৩ সালে পূর্ব জার্মানি, ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরি কিংবা ১৯৬৮ সালে চেকোশ্লোভাকিয়ার মতো ১৯৮৯ সালে পূর্ব জার্মানির স্বাধীনতা আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করা হয়নি৷ বার্লিন প্রাচীরের পতন পুবের জার্মানদের শান্তিপূর্ণ বিপ্লবকে পূর্ণাঙ্গ করে৷

৯ নভেম্বর ছিল এক সুখের, আবেগের দিন৷ এ`দিনে সব বিস্মৃত, অবহেলিত অনুভূতি আবার ফুটে ওঠে: দু`তরফেই পুনর্মিলনের আকাঙ্খা; পুবের মানুষদের স্বাধীনতার আকাঙ্খা৷ জার্মানরা, বিশেষ করে বার্লিনের মানুষজন যেন ঘোরে ছিলেন৷ এমন এক আনন্দের অনুভূতি, যা আমাদের অনেককে কাঁদিয়ে ছেড়েছিল৷ সেই অনুভূতিই আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে, ৪০ বছরের বিভাজনও দুই জার্মানির আত্মীয়তাবোধকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি৷ এই প্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে উইলি ব্রান্ড`এর সেই চিরন্তন, অপরূপ কথাগুলি: ‘‘যা একসঙ্গে হবার কথা, তা`ই এখন একসঙ্গে হচ্ছে``৷ জার্মান কথাটা হলো ‘ওয়াকসেন`, মানে গজিয়ে ওঠা, লতাপাতার মতো, প্রকৃতির মতো৷ সেই উদ্ভিন্ন জার্মান ঐক্যে কিন্তু জার্মানির প্রতিবেশীদের কোনো বিপদ ঘটেনি৷ ১৯৮৯`র শান্তিপূর্ণ বিপ্লব জার্মানিকে ইউরোপের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করে৷

পুবের জার্মানদের বিদ্রোহ ছিল কম্যুনিস্ট একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে, যে ‘‘তত্ত্বাবধায়ক রাষ্ট্র`` সব কিছুকে নিয়মের জালে জড়িয়ে রাখে, বেঁধে রাখে৷ পুবের জার্মানরা বিদ্রোহ করেছিলেন এক উন্মুক্ত দেশের দাবিতে, যে দেশে মানুষজনকে আটকে রাখা হয় না৷ যে কারণে যাত্রার স্বাধীনতা ছিল তাদের একটি কেন্দ্রীয় দাবি৷ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কমানোর দাবিটা অতো জোরালো ছিল না৷ যে কারণে ইতিহাসের একটি রসিকতা হলো এই যে, পুনরেকত্রিত জার্মানির রাজনৈতিক ডিএনএ`তে একটি ‘‘শক্তিশালী কল্যাণরাষ্ট্রের`` স্বপ্ন ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত৷

৯ নভেম্বরের পর জার্মানি আরো বেশি প্রোটেস্টান্ট, আরো বেশি পূর্বমুখী, আদর্শবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে আরো বেশি মধ্যমপন্থি এবং কম বিতর্কিত হয়ে উঠেছে৷ বলতে কি, জার্মানি যেন আরো বাম-ঘেঁষা হয়ে উঠেছে৷ এই জার্মানির প্রতিনিধিত্ব এবং শাসনের দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক পূর্ব জার্মানির দুই নাগরিক: ইওয়াখিম গাউক এবং আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ ঐক্যও অনেক দূর এগিয়েছে, যদিও অনেকের কাছে তা এখনও দৃষ্টিগোচর নয়৷ সেই ঐক্যের সূচনা ঘটে ৯ নভেম্বর ১৯৮৯`র সুখস্মৃতিতে৷

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।