ভোট বাড়াতে নগদ অর্থ ছড়াচ্ছেন ভারতের রাজনীতিবিদরা
ভারতের রাজনৈতিক মহলে নগদ অর্থ বিতরণের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি (এএপি) নারী কল্যাণের জন্য প্রতি মাসে এক হাজার রুপি বিতরণের এক নতুন কর্মসূচি চালু করে। তবে, তাদের এই উদ্যোগকে প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অথচ তারাই আবার দিল্লির স্থানীয় নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়েছে—নারীদের জন্য মাসিক আড়াই হাজার রুপি বিতরণ করবে দলটি।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নগদ অর্থ বিতরণ এখন রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। দিল্লির পাশাপাশি, দেশটির অন্তত ১১টি রাজ্যে নারীদের জন্য সরাসরি অর্থ বিতরণ কর্মসূচি চালু রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১৩ কোটি ৪০ লাখ নারী উপকৃত হচ্ছেন, যা ভারতের প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এ কর্মসূচিগুলোর বার্ষিক ব্যয় প্রায় দুই লাখ কোটি রুপি, যা ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন>>
কেবল নারীরাই নয়, কৃষকরাও এ ধরনের সুবিধার অন্যতম প্রধান প্রাপক। ২০১৮ সালে তেলেঙ্গানা রাজ্য প্রথমবারের মতো কৃষকদের জন্য প্রতি একরে চার হাজার রুপি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। পরে উড়িষ্যা এবং জাতীয় সরকারও একই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এমনকি মহারাষ্ট্রে পশু আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা গরুর জন্য প্রতিদিন ৫০ রুপি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
ভারতে নগদ অর্থ বিতরণ মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটব্যাংক বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে এক নির্বাচনের আগে নারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তরের জন্য ভোটগ্রহণ বিলম্বিত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। গবেষণা বলছে, যেসব নারী নগদ অর্থ পেয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে এবং তারা সরকারি দলের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন।
নগদ অর্থ বিতরণ কর্মসূচির ফলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ব্যয় ক্ষমতা ৭ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতেও এটি ভূমিকা রাখছে। তবে শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যখাতে এ ধরনের কর্মসূচির তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। শর্তযুক্ত অর্থ স্থানান্তর কর্মসূচি যেমন—স্কুলে উপস্থিতি বা টিকাদান সম্পন্ন করার শর্ত—অর্থনীতির উন্নয়নে বেশি কার্যকর বলে গবেষকরা মনে করছেন।
সমালোচনা ও ভবিষ্যৎ
সমালোচকরা বলছেন, নগদ অর্থ বিতরণের কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্রে নারীদের নগদ অর্থ কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাজ্যের স্বাস্থ্য খাতের মোট বাজেটের চেয়ে বেশি। তাছাড়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগদ অর্থ বিতরণের বর্তমান প্রবণতা ভারতের রাজনীতিতে এক প্রকার প্রতিযোগিতামূলক কল্যাণনীতির সূচনা করেছে। তবে দেশটির নাগরিকরা, বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে ক্রমশ হতাশ হয়ে উঠছেন। ভবিষ্যতে ভোটাররা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অধিক দায়িত্বশীল ও টেকসই নীতিমালা আশা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/