আশুলিয়ায় মরদেহে আগুন

সাবেক এমপিসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে ১১তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল/ ফাইল ছবি

গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানো এবং ৪ আগস্ট একজনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে ১১তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সপ্তম দিনের সাক্ষ্য শেষ করা হয়েছে। মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৭ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল–২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল মামলার ১১তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ ও সাইমুম রেজা তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও সহিদুল ইসলাম।

আজ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষী সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিককে জেরা দিয়ে শুরু করেন মামলার কার্যক্রম। জেরা শেষে অপর সাক্ষী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক কর্মকর্তা গোলাম ইফতেখার আলম রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেন। তাকে জেরা শেষে মামলার ১১তম সাক্ষী কনস্টেবল মাসুদ রানার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দি শেষে তাকেও জেরা করেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত দুই স্টেট ডিফেন্সসহ আসামীপক্ষের আইনজীবীরা।

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দিনের মতো জবানবন্দি পেশ করেন দুজন সাক্ষী। তবে সাংবাদিক অনিকের জেরা শেষ না হওয়ায় মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মূলতবি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এর পর পর্যায়ক্রমে ১১জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন। এরপর এ বিষয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় ট্রাইব্যুনালে প্রথমদিন সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা। তবে রেজওয়ানুলের জেরা শেষ হলেও সজলের বাবার সাক্ষ্য-জেরা চলমান।

শুনানির পর চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম ওইদিন সাংবাদিকদের বলেন, আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশের ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় জীবিত ছিলেন একজন। এমন বর্বরতা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে আটজন পলাতক।

এ মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাদের মধ্যে আট আসামি গ্রেফতার আছেন। বাকি আট আসামি পলাতক। আসামিদের মধ্যে আশুলিয়া থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হক ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালকে আবজালুল হক মৌখিকভাবে জানান, তিনি দোষ স্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়ে পূর্ণাঙ্গ সত্য উন্মোচন করতে চান এবং ক্ষমা চান।

গ্রেফতার অন্য সাত আসামিরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন ও কামরুল হাসান, সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির পর প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহগুলো পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। যখন এসব মরদেহে আগুন দেওয়া হচ্ছিল, তখন একজনকে জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এর আগের দিন ৪ আগস্ট একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মোট সাতজনকে হত্যা ও ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।

গত ২ জুলাই এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২ জন, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়েছে।

এফএইচ/এমএমকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।