ট্রাইব্যুনালে ১৭ ভিডিও প্রদর্শন, উঠে এলো হত্যার নির্মম চিত্র

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল/ ফাইল ছবি  

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দমাতে হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। গুলি ছোড়ার সেই ভিডিও দেখানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তবে ভিডিও দেখার পর আসামীপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন দাবি করেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার দৃশ্য ভিডিওতে দৃশ্যমান নয়। পরে ভিডিওটি পুনরায় চালু করে গুলি করার দৃশ্য দেখানো হয় ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এ মোট ১৭টি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। ভিডিওতে উঠে আসে অভ্যুত্থানের সময়কার ভয়াবহ ও লোমহর্ষক দৃশ্য। প্রথম ভিডিওটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ডকুমেন্টারি। দ্বিতীয় ভিডিওটি ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও চিত্র। এটি বিটিভি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অসম্পাদিত।

এদিন মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ ও ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি পেশ করেন। তিনি তার জবানবন্দির শুরুতেই জুলাই বিপ্লবের সময়কার ভিডিও ও তথ্য সরাসরি প্রদর্শনের অনুমতি নেন। গণহত্যা মামলার আসামি শেখ হাসিনার অপরাধের সপক্ষে প্রসিকিউশনের দালিলিক প্রমাণ হিসেবে এসব ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও প্রদর্শনের পর প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্রদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে গালি দেন। তার ওই বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা রাতে বিক্ষোভ করেন।

তৃতীয় ভিডিওটি ১৪ জুলাই রাতে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদের বিক্ষোভের চিত্র। তাতে দেখা যায়, সাধারণ ছাত্ররা হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। চতুর্থ ভিডিওটি ১৫ জুলাই ঢাবিতে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা সংক্রান্ত। এটি একটি গণমাধ্যমের ভিডিও প্রতিবেদন থেকে সংগ্রহ করা। পঞ্চম ভিডিও রংপুরে আবু সাঈদের হত্যা সংক্রান্ত। এতে দেখা যায় দুই হাত প্রসারিত করে গুলির মুখে দাঁড়ানো আবু সাঈদের সেই আইকনিক পোজ। ষষ্ঠ ভিডিওতে র‍‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের দৃশ্য দেখানো হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন এ সময় বলেন, ভিডিওতে গুলি করতে দেখা গেছে, এমন দৃশ্য এখানে দৃশ্যমান নয়। এসময় ভিডিওটি পুনরায় চালু করে গুলি করার দৃশ্য দেখানো হয়।

সপ্তম ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানকে এক পুলিশ কর্মকর্তা একটি ভিডিও দেখান। তাতে দেখা যায়, ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একটা গুলি করি, একটাই যায়, বাকিডি যায় না স্যার।

অষ্টম ভিডিওতে পুলিশ কর্তৃক যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি শিশুকে নির্যাতন ও গুলি করার দৃশ্য দেখানো হয়। নবম ভিডিওতে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যাওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণের আহত হওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়। এ পর্যায়ে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, এই খোকন হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি ছিলেন প্রথম সাক্ষী।

দশম ভিডিওতে সাভারে পুলিশের এপিসি থেকে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়। ১১তম ভিডিওটি মরদেহ পোড়ানো সংক্রান্ত। আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে ছয়জন আন্দোলনকারীর মরদেহ পোড়ানোর দৃশ্য দেখানো হয় এই ভিডিওতে।

১২তম ভিডিওতে, চানখারপুলে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলির দৃশ্য দেখানো হয়। এখানে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ ও এপিবিএনের কয়েকজন সদস্যকে শুয়ে, বসে যুদ্ধরত স্টাইলে হাঁটু গেড়ে শর্টগান, চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়।

১৩তম ভিডিওতে রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে দুই পুলিশের গুলির দৃশ্য উঠে আসে। ১৪তম ভিডিওতে দুজন আন্দোলনকারী একটি গেটের কাছে লুকিয়ে ছিলনে। এসময় একজন আনসার সদস্য তাদের গুলি করেন, এমন দৃশ্য দেখা যায়।

১৫তম ভিডিওতে ফার্মগেট এলাকায় পুলিশের গুলির দৃশ্য দেখানো হয়। তাতে এপিসি থেকে গুলির দৃশ্য রয়েছে। ১৭তম ভিডিওতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের নিউজ দেখানো হয়। তাতে হাসিনা জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার বিতরণ করছেন। এ ছাড়াও ভিডিওতে বিদেশি সংস্থার ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা ভিডিও দেখানো হয়। এর ব্যাপ্তি ১৪ মিনিট। ৪০০ ভিডিও একত্রিত করে সময়ের ধারাবাহিকতা অনুয়ায়ী এই ভিডিও তৈরি করা হয়। এতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ৫ আগস্ট দুপুর ২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত যে ম্যাসাকার হয়েছে, তার বিবরণ পাওয়া যায়।

এফএইচ/এমএমকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।